অনামিকা,অন্তরা অনার্স ও মাষ্টার্স পড়ুয়া দুই বোন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম তাদের। দিনমজুর বাবা নুর আলীর শরীর ঘামানো রোজগারে ভর করে শত কষ্টের মাঝে এতটুক লেখাপড়ায় এগুতে পেরেছে। কিন্তু সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী সেই বাবাই অসুস্থ হয়ে এখন প্রায় মৃত্যুর পথযাত্রী।
একদিকে টাকার অভাবে বাবাকে সুস্থ করতে পারছেন না। অন্যদিকে সংসারে রোজগারের কেউ না থাকায় তাদের পেটে দানা পানিও জুটছে না। আর দুই বোনের লেখাপড়া শেষের মাধ্যমে চাকুরীসহ অন্যান্য আশার স্বপ্নগুলো মুছে যাচ্ছে। তাদের বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের পান্তাপড়া গ্রামে।
অন্তরার মা মিনা বেগম জানান, তার স্বামী একজন পরিশ্রমী মানুষ। বসতভিটের মাত্র ৭ শতক ছাড়া মাঠে কোন চাষযোগ্য জমি নেই। দিনমজুরের বিভিন্ন ধরনের কাজ করে তার স্বামী মেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসারের যাবতীয় খরচ মেটাতেন। এতে কষ্ট হলেও চলে যেতো। কিন্ত প্রায় দেড় বছর আগে তার স্বামী নুর আলী সর্দার পাইলস এ আক্রান্ত হন। সে সময়ে টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারেননি। ধীরে ধীরে ক্ষতস্থানে ক্যান্সারে রুপ নেয়। দরিদ্র পরিবার হলেও তাদের সম্পদ বলে যা কিছু ছিল তা সবকিছু শেষ করেছেন। পরে নিরুপায় হয়ে গ্রামবাসীর কাছে হাত পেতে প্রমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে মহাখালী ক্যানসার হাসপাতাল তাকে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্ত এখনও তার পায়ুপথ বাদে বিশেষ পাইপের মাধ্যমে অন্য দিক দিয়ে মলত্যাগ করানো হচ্ছে।
চিকিৎসক বলেছেন, আরও একটি অস্ত্রপোচার করাতে পারলে এখন পায়ুপথ দিয়েই সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা। যে টাকা জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না।
অন্তরা ইয়াসমিন জানান, তার বাবা একজন ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী ছিল। সংসারে অন্য কোন আয়ের উৎসও নেই। বাবাই ছিলেন একমাত্র উপার্জনশীল মানুষ। কিন্ত তিনি অত্যন্ত সৎ ও পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন। কিন্ত গত প্রায় ২ বছর ধরে পায়ুপে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। এ পর্যন্ত তার চিকিৎসায় সংসারে যা ছিল তার সবই শেষ। গ্রাম ও এলাকার মানুষের আর্থিক সহযোগীতা পেয়েছেন। রোজগারের লোকজন না থাকায় একদিকে এখন তাদের না খেয়েই থাকতে হচ্ছে।
অন্তরা আরও জানান, তারা ৩ বোন। এস এসসি পাসের পর বড় বোন ছন্দা খাতুনের বিয়ে হয়ে যায়। আর তিনি মেজো। বর্তমানে যশোর সরকারী মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে মাষ্টার্সের শিক্ষার্থী। আর ছোট বোন অনামিকা ইয়াসমিন যশোর এম এম কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। স্বপ্ন ছিল অনেক। যা বাবাকে সুস্থ করতে পারলে হয়তো পূরণ হতে পারে। আর না হলে স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে।
অসুস্থ নুর আলী জানান, পরিবারের তিনি ছাড়া আর কেউ উপার্জন করতে পারেন না। অসুস্থ হওয়ার পর প্রতিবেশীরা যা দেয় তাই খেয়ে বেঁচে আছি। সর্বশেষ এই অপারেশনটা করাতে পারলে আবার পরিশ্রম করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। নাহলে দুই মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
গ্রামের বাসিন্দা ও কোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আরিফ হোসেন জানান, তাদের গ্রামের নুর আলী সর্দার সত্যিই একজন পরিশ্রমী মানুষ। মাঠে জমি না থাকলেও দিনমজুর হয়েও ৩ মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছে। যা অনেক র্অশালী মানুষ হয়েও আমরা পারিনি।
তিনি বলেন, এ মানুষটা বেশ অসুস্থ। চিকিৎসায় তারাও কয়েক দফায় আর্থিক সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন। আরও একটি অপারেশন প্রয়োজন। এ জন্য এ পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন।
সাহায্য পাঠাতে– ০১৭৫৩–০৭৩২৮৫ (বিকাশ ও নগদ)। এ্যাকাউন্ট নম্বর– ৪২১৪২৬১৩৭৮৩০০, অন্তরা ইয়াসমিন, এবি ব্যাংক লিমিটেড, যশোর শাখা।
যূথী/দীপ্ত সংবাদ