জুলাই ঘোষণাপত্রকে অসম্পন্ন বিবৃতি উল্লেখ করে এতে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি বলে এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর মগবাজারে দুপুরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলেন এই প্রতিক্রিয়া জানান দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৮ দফার জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এই ঘোষণাপত্র একটি অপূর্ণাঙ্গ বিবৃতি। এতে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি।
ডা. তাহের বলেন, ঘোষণাপত্রে দীর্ঘ লড়াই–সংগ্রামের কথা বলা হলেও ১৯৪৭’র আজাদীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড, ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ নেই। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আলেম–ওলামা, মাদরাসা শিক্ষক ও ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের ভূমিকার উল্লেখ নেই—যা ইতিহাসের প্রতি অবিচার ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৯ দফা, যা এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল সে বিষয়টিও ঘোষণাপত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।’
ডা. তাহের বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দুই পর্বের কার্যক্রমে ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ প্রধান উপদেষ্টার পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। ঘোষণায় কখন কীভাবে তা কার্যকর করা হবে— তা উল্লেখ না করে ঘোষণাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। পরবর্তী সরকারের হাতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়ায় হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই চেতনা ও আশা–আকাক্সক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে দলটি।
তিনি বলেন, জামায়াত প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত নির্বাচনের টাইম লাইন (ডিসেম্বর–জুন) শর্ত সাপেক্ষে সমর্থন দিয়ে আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করার সমালোচনা করেন তিনি। তবে জাতীয় স্বার্থে নির্বাচনের ঘোষণাকে দলটি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বলে জানান জামায়াতের এই নেতা।
জামায়াতকে নির্বাচনমুখী দল উল্লেখ করে ডা. তাহের বলেন, সারা দেশে নির্বাচনের উপযুক্ত যে পরিবেশ থাকার কথা ছিল তা সরকার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তার আইনি ভিত্তি দিতে হবে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর লিগাল ফ্রেম ওয়ার্কের ভিত্তিতে ৭০–এর নির্বাচন হওয়ার প্রসঙ্গও টানেন জামায়াতের এই সিনিয়র নেতা।
ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আমাদের আকাঙ্ক্ষা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোট এর মাধ্যমে আইনি ভিত্তি দেওয়া। তা না করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানায় জামায়াত।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আপামর জনতা জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যে প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল— তা পূরণ হয়নি। শহীদ ও আহতদের পরিবারসহ জুলাই যোদ্ধাদের মাঝে নতুনভাবে উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে তা জাতির কাছে অস্পষ্ট। অনতিবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্রে জনআকাঙ্ক্ষার অপরিহার্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়নের কাজ সুসম্পন্ন করে বর্তমান সরকারকেই তা বাস্তবায়ন করে এর ভিত্তিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিও জানিয়েছে জামায়াত।
সূচনা বক্তব্যে ডা. তাহের চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, ফ্যাসিবাদী ১৬ বছরের জুলুম নির্যাতন, জনগণের আকাঙ্ক্ষা, আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের অবদান তুলে ধরেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।
আল