পাঁচ সংস্কার কমিশনের দেয়া সংস্কার প্রস্তাবনা ও সুপারিশমালা নিয়ে আলোচনা করতে গণসংহতি আন্দোলন এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মধ্যে আজ এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল দশটার দিকে সংসদ ভবনের এলডি হলে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু, হাসান মারুফ রুমী ও মনির উদ্দীন পাপ্পু এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, ইমরাদ জুলকারনাইন, দীপক রায় ও তরিকুল সুজন।
বৈঠকে গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে জোনায়েদ সাকি বলেন, এখন পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনদের যে আলোচনা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতে যতটুকু ঐকমত্য তৈরি হয়েছে সেগুলোকে নথিবদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় যেসকল সংস্কার প্রস্তাবে এখনও পর্যন্ত ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সেগুলো নিয়ে অধিকতর আলাপ আলোচনা চালিয়ে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ঐকমত্য তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ঐকমত্য কমিশনের প্রতি আহবান জানান তিনি। একই সাথে গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকেও এই ঐকমত্য তৈরির প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করেন জোনায়েদ সাকি।
বৈঠকে গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন হিসেবে সম্পন্ন করার আহবান পুনর্ব্যক্ত করা হয়। যেসকল সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, ১৫ জুলাইয়ের মধ্যেই সেসব বিষয় লিপিবদ্ধ করে জুলাই চার্টার ঘোষণার ব্যাপারে জোর দেন দলের প্রতিনিধিবৃন্দ। জুলাই চার্টারের ভিত্তিতে সংবিধান সংক্রান্ত সংস্কারগুলোকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচনের পর করা এবং অন্যান্য সংস্কারগুলোকে অধ্যাদেশের মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার আহ্বান জানান তারা।
একইসাথে, সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে সকলের ঐকমত্য হবে না, সেগুলোকে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় গ্রহণের জন্য নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আহ্বান জানানো হয় বৈঠকে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবনা আকারে এসব প্রস্তাব জনগণের সামনে আসবে এবং জনগণই ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করবে তারা কোন কোন দলের প্রস্তাবে সম্মতি দিচ্ছে। এভাবে সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়নে জনগণের সর্বোচ্চ সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার আহবান জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিনিধিবৃন্দ।
বৈঠকে ইতিপূর্বে গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষ থেকে যে ১৩৮টি সংস্কার প্রস্তাবে সম্মতি জানানো হয়েছে এবং আরও যেসব বিষয়ে বিশেষ প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে আলোচনা হয়। বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ এনসিসি–র বিষয়ে যেন সকলে একমত হতে পারে সেজন্য আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য কমিশনের প্রতি আহবান জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিনিধিবৃন্দ। একইসাথে ভবিষ্যতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হলে সেটি যেন সংসদের উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হয় সে বিষয়েও প্রস্তাব রাখেন তারা।
বৈঠকে সংস্কার এবং নির্বাচন যেভাবে মুখোমুখি অবস্থানে এনে সংকট তৈরি হচ্ছে সেটার সমাধানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভূমিকা জোরদার করার আহবান জানান গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিনিধিবৃন্দ। সংস্কার এবং নির্বাচনকে পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করে সকল রাজনৈতিক দল, জনগণ এবং অংশীদারদের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টির ব্যাপারে সর্বোচ্চ জোর দিয়ে ভূমিকা নেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনকে আহ্বান জানান তারা। একইসাথে এই বিষয়ে নিজেদের দলের পক্ষ থেকে জোরদার ভূমিকা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিনিধিবৃন্দ।
আল