দিনব্যাপী বিশেষ জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন করেছে আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন।
মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতার এ দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপনের লক্ষ্যে দুই পর্বে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্বাধীনতা দিবসের এ অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রায় শ্রীপর্ণাকে বিশেষ সম্মাননা জ্ঞাপন করে আগরতলার বাংলাদেশ দূতালয়।
এদিন সকাল ১০ টায় কুঞ্জবনের সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১০ টা ৫ মিনিটে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে জাতির পিতা, তার পরিবারের শাহাদতবরণকারী সদস্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ১০ টা ১১ মিনিটে জাতির পিতা, তার পরিবারের শাহাদতবরণকারী সদস্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়।
সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আগরতলার হোটেল পোলো টাওয়ার্সে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিটে সহকারী হাইকমিশনের প্রথম সচিব মো. আল আমীন বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের গভর্নর ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু, বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, ত্রিপুরা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিন্দম লোদ, ত্রিপুরা হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এস সি দাস, লোকায়তের চেয়ারপারসন শ্রী কল্যাণ নারায়ণ ভট্টাচার্য, ত্রিপুরা বিধানসভার সম্মানিত বিধায়ক শ্রী সুদীপ রায় বর্মণ, ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব জিতেন্দ্র কুমার সিনহা, ত্রিপুরা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল শ্রী সিদ্ধার্থ শংকর দে প্রমুখ।
এছাড়া অন্যদের মধ্যে বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বেশ কয়েকজন সম্মানিত সচিব, আইএএস ও আইপিএসসহ রাজ্যে কর্মরত সব উচ্চ স্তরের সরকারি আধিকারিকরা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিএফএআই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, মহারাজা বীর বীক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব শ্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের উত্তরাধিকারী, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ত্রিপুরার সুনামধন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার স্বত্বাধিকারী/সম্পাদক, ব্যবসায়ী নেতা এবং ত্রিপুরার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনের কর্মকর্তা–কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ তার মূল বক্তব্যে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রমহারা ২ লাখ মা বোন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সর্বতোভাবে সহযোগিতার জন্য ভারতের জনগণ, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তথা ভারত সরকার, ভারতের তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা অটল বিহারী বাজপায়ী, মিত্র বাহিনী, সংস্কৃতিকর্মী, সংবাদকর্মী, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও বলেন, বিগত ৫ দশকে ত্রিপুরার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক, মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার ভূমিকা এবং বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐতিহাসিক সম্পর্কের ফলে দুদেশের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
আরিফ মোহাম্মাদ বলেন, ‘বিগত ৫০ বছর ধরে আমরা এ রাজ্যের মানুষের সেবা করতে পেরে আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, যোগাযোগ ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন, আগরতলা রাজ্যের সব অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে ত্রিপুরা রাজ্যর গভর্নর শ্রী ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু তার বক্তব্যে ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার অবদানের স্মৃতিচারণ করে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের মানুষের আত্মীয়তার সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে আলোকপাত করেন।
তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও ত্রিপুরায় যে ধরনের সংযোগ রয়েছে ও ভবিষ্যতে যে ধরনের কানেকটিভিটি চালু হচ্ছে তা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
রাত ৮টায় আলোচনা সভা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রায় শ্রীপর্ণার পরিবেশনায় মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে গোটা হল জুড়ে।
রাত সাড়ে ৮টায় অতিথিদের সম্মানে রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়। রাত সাড়ে ৯টায় উপস্থিত সুধীজনকে সহকারী হাইকমিশনের পক্ষ থেকে একটি সৌজন্য উপহার দেয়া হয়। একই সঙ্গে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
আল / দীপ্ত সংবাদ