রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের সদ্য অনুমোদিত প্রস্তাবিত পদোন্নতি নীতিমালাকে ‘বৈষম্যমূলক ও পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে দাবি করেছেন কর্মকর্তাদের একটি অংশ। তাদের অভিযোগ, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে কয়েক হাজার মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতির ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
নীতিমালার খসড়া অনুমোদিত হলেও কর্মকর্তাদের একাংশ বলছেন, এতে যোগ্যতার বদলে জ্যেষ্ঠতাকে প্রধান মূল্যায়নের মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়েছে। যেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য একটি সমন্বিত পদোন্নতি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে, সেখানে জনতা ব্যাংক এককভাবে ও দ্রুতগতিতে আলাদা নীতিমালা করে তা বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে।
কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, নতুন নীতিমালায় এমন কিছু মূল্যায়ন সূচক রয়েছে, যা আগে দেশের কোনো ব্যাংকে অনুসরণ করা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, নবম গ্রেডে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ‘সিনিয়র অফিসার‘রা এখন দশম গ্রেডে ‘অফিসার‘ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কারও চেয়ে নম্বর কম পাচ্ছেন—শুধু মাত্র চাকরির মোট মেয়াদের কারণে। এতে গ্রেড অনুযায়ী মূল্যায়ন কাঠামো লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং সিনিয়র অফিসারদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
প্রস্তাবিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, একজন অফিসার হিসেবে আগে যোগদানকারী প্রতি বছর ০.২৮ নম্বর করে সর্বোচ্চ ৭ নম্বর পর্যন্ত পাবেন। অন্যদিকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে পরে যোগদান করা কেউ এই বাড়তি নম্বর না পেয়ে পিছিয়ে পড়বেন, যদিও তাদের পদমর্যাদা বেশি। এর ফলে সিনিয়র অফিসারদের প্রায় ৩,০০০ জনকে পেছনে ফেলে অনেকেই সহজেই পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক আবুল বারকাতের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত একটি বিশেষ ব্যাচ ও গ্রুপের কর্মকর্তারা এই নীতিমালার প্রধান সুবিধাভোগী হচ্ছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি জনতা ব্যাংকে পূর্ববর্তী বিতর্কিত নিয়োগপ্রক্রিয়ার প্রতিফলন এবং এর ফলে ব্যাংকের ভেতর নতুন করে বিভাজন তৈরি হবে।
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সিনিয়র অফিসারদের পক্ষ থেকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, “ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিন্তু এই প্রস্তাবিত নীতিমালার ফলে আমাদের মধ্যে চরম হতাশা তৈরি হয়েছে। এতে দক্ষ, সৎ ও উদ্যমী কর্মকর্তারা পদোন্নতিতে ন্যায্যতা পাবেন না।”
এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “এখনো এটি খসড়া পর্যায়ে আছে। আমরা বিভিন্ন মতামত বিবেচনায় নিয়েই এটি চূড়ান্ত করব।”
সরকারের সমন্বিত নীতিমালার আগেই কেন এই সিদ্ধান্ত—জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সরকারি নীতিমালা ২০২৫ সাল থেকে কার্যকর হবে, আমরা ২০২৪ সালের পদোন্নতির জন্য পৃথকভাবে নীতিমালা করছি। এতে পর্ষদও একমত।”