বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার, আগস্ট ৫, ২০২৫
মঙ্গলবার, আগস্ট ৫, ২০২৫

জনগণ প্রতি বছর আজকের দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে উপভোগ করবে

তারেক রহমান

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে ২০২৪ সালের এই দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। রাহুমুক্ত হয়েছে দেশ। স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের জন্য দিনটি আনন্দের। দিনটি বিজয়ের। বাংলাদেশের এই দিনটিকে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। জনগণ প্রতি বছর আজকের দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে উপভোগ করবে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, একুশ শতকের এই বাংলাদেশে পলাতক স্বৈরাচার এক বিভীষিকার রাজত্ব কায়েম করেছিল। গুম খুন অপহরণ হামলা মামলা নির্যাতন নিপীড়নকে সাধারণ এবং স্বাভাবিক ঘটনায় রূপান্তর করেছিল। এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনের সময় বিএনপিসহ ভিন্ন দল এবং মতের গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির লাখো কোটি নেতাকর্মীর জন্য দেশকে নরকে পরিণত করে রাখা হয়েছিল। শত শত মিথ্যা মামলার কারণে ভিন্ন দল এবং মতের লাখ লাখ নেতাকর্মী সমর্থককে ঘরবাড়ি ছাড়া করে দেওয়া হয়েছিল। অনেকের পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে।

গণতন্ত্রকামী মানুষের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে পলাতক স্বৈরাচারের নির্দেশে দেশে শত শত গোপন বন্দীখানা ‘আয়নাঘর’ বানানো হয়েছিল। সেই আয়নাঘরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জলজ্যান্ত মানুষকে দিনের পর দিন রাতের পর রাত বছরের পর বছর আটকে রাখা হতো। অনেককে চিরতরে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী কিংবা কমিশনার চৌধুরী আলমের আজও খোঁজ মেলেনি।

বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ দেশের সব সাংবিধানিক বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছিল। সংবিধান উপেক্ষা করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছিল। দেশকে চিরতরে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করার সকল আনুষ্ঠানিকতা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিলো। বই খাতা কলমের পরিবর্তে রাজনীতির নামে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল লগিবৈঠাহাতুড়িচাপাতি।

বিপর্যস্ত করে দেওয়া হয়েছিল দেশের অর্থনীতি। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছিল। দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেওয়া হয়েছে। অন্যায় অনিয়ম অনাচার দুরাচার লুটপাট দৈনন্দিন চিত্র হয়ে উঠেছিল। দেশে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল ব্যক্তিতন্ত্র।

তবে ফ্যাসিস্টের শেষ রক্ষা হয়নি। দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, ছাত্র জনতা, কৃষক শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, মুটে মজুর, গার্মেন্টসকর্মী, হোটেল রেস্তোরাঁকর্মী, পরিবহন শ্রমিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সংস্কৃতি কর্মী, গৃহবধূ, নারী শিশু এমনকি আমাদের মায়েরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলাইআগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে এসেছিল। গণঅভ্যুত্থান দমন করতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। কোলের শিশু, শহীদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধ, আমাদের এসব সাহসী সন্তানদের বুকে গুলি করে শহীদ করে দেওয়া হয়েছিল।

শুধু ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের গণঅভুত্থানেই দেড় হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। ছাত্র জনতা, কৃষক শ্রমিক, নারী শিশু বৃদ্ধ, সাংবাদিক, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, ফ্যাসিস্টের গুলির নিশানা থেকে কাউকেই রেহাই দেওয়া হয়নি। এই অভুত্থানে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ। হাত পা শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হারিয়ে আমাদের শত শত সন্তান, শত শত ভাই ও বোনেরা চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন কিংবা চোখ হারিয়ে আজীবনের জন্য অন্ধ হয়ে গেছেন।

এজন্য আমি বলি, ১৯৭১ সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ। আর ২০২৪ সালে ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। ৭১ সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ ভোলেনি। ২৪ এর গণ অভ্যুত্থানের শহীদদেরও বাংলাদেশ ভুলবে না। ৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীনতা রক্ষা, স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন এভাবে ইতিহাসের প্রতি বাঁকে লাখো মানুষ শহীদ হয়েছেন। আজকের এই দিনে আমি আবারও সব শহীদদের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি।

দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে শহীদরা আমাদের ঋণী করে গেছেন এবার শহীদের প্রতি আমাদের ঋণ পরিশোধের পালা। শহীদদের পরিবারের কাছে বাংলাদেশ ঋণী। দেশে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে সাম্য মানবিক মর্যাদা সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমেই আমরা শহীদদের প্রতি ঋণ পরিশোধ করতে পারি।

স্বাধীনতা প্রিয় গণতন্ত্র প্রিয় ভাই ও বোনেরা, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম এবং রাজনৈতিক উদ্যোগ হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি রাষ্ট্র এবং সরকার প্রতিষ্ঠা। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে।

বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে স্বাধীনতা পরবর্তী তিনসাড়ে তিন বছরের সময়কাল ছাড়া আর কোনো শাসনামলের তুলনা চলে না। সুতরাং, আমি সবাইকে বিনীতভাবে আহ্বান জানাবো, হিটলারের নাৎসিবাদ সম্পর্কে যেমন কেউ গৌরব করে না, পলাতক ফ্যাসিস্টের শাসনকাল নিয়েও গৌরব করার কিছু নেই। ডাকাতি করে কিছু সম্পদ চ্যারিটি করলেও জনগণের চোখে ডাকাত যেমন গ্রহণযোগ্য নয় তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা খুঁজতে গিয়ে কৌশলে পলাতক ফ্যাসিস্টয়ের পক্ষে সাফাই গাওয়াও তেমনি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

যারা কৌশলে ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তুলনা করতে চান, তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যা ঘটেছে, এটি শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের ইতিহাসেও মনে হয় নজিরবিহীন। ৫ আগস্ট গণভবন ছেড়ে ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে। সংসদ ভবন রেখে সাংসদ পালিয়েছে। আদালত ছেড়ে প্রধান বিচারপতি পালিয়েছে। বায়তুল মোকাররম ছেড়ে প্রধান খতিব পালিয়েছে। ক্যাবিনেট ছেড়ে মন্ত্রীরা পালিয়েছে। ফ্যাসিস্টের দোসররা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পলাতক এই ফ্যাসিস্ট চক্রের মনে এখনো কোনো অনুতাপ অনুশোচনা নেই।

হাজারো শহীদের রক্তস্নাত রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে না, কাউকে গণতন্ত্র হত্যা করার সুযোগ দেওয়া হবে না, বাংলাদেশকে আর কখনোই তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেওয়া হবে না। আমি মনে করি এসব প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য বহাল আছে, থাকবে।

ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে যার যার দলীয় আদর্শ এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইস্যুভিত্তিক ভিন্নমত থাকবে। এটি বিরোধ নয় বরং ভিন্নমত। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে ভিন্নমত কিংবা বিরোধের মাত্রা যেন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থার উত্থান কিংবা পুনর্বাসনের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More