পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্থা বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে নানা রকম জরিপ পরিচালনা করে থাকে। কোনো সংস্থা খোঁজে নিরাপদ দেশ, কেউ খোঁজে শান্তি, কেউ খোঁজে পারিশ্রমিকের হিসাব-নিকাশ। বিশ্ব গণমাধ্যমে সেসব তথ্য ব্যবহার করে প্রতিবেদনও প্রকাশ করে থাকে। কৌতুহলবশত আমি বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ভীষণ আলোচিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ‘চ্যাট জিপিটি’র কাছে জানতে চেয়েছি, ২০২৩ সালে ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর ১০ দেশ সম্পর্কে। প্রশ্ন করেছি, কেন সেই দেশগুলো সবচেয়ে সুন্দর, সে তথ্যও আমাকে দাও। এরপর বাকিটা ইতিহাস!
চ্যাট জিপিটি ইউরোপ মহাদেশের কোন ১০ দেশকে সবচেয়ে সুন্দর বলছে, চলুন জেনে আসি।
ইতালি
তালিকার প্রথমে রয়েছে ইতালি। ইতালি এমন একটি দেশ যা বহু শতাব্দী ধরে তার অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং সুস্বাদু খাবারের জন্য পরিচিত। ভেনিসের মনোরম খাল থেকে শুরু করে রোমের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ; ইতালিতে সৌন্দর্যের কোনোই অভাব নেই।
ইতালির পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ আমালফি উপকূলের অবাক করা সৈকত কিংবা টাস্কানির ঘূর্ণায়মান পাহাড় পর্যন্ত দেশটির ল্যান্ডস্কেপও বেশ বৈচিত্র্যময়।
ইতালি বিখ্যাত তার অনিন্দ্য সব স্থাপত্যশৈলীর জন্য। দেশটিতে কলোসিয়াম, পিসার হেলানো টাওয়ারসহ আরো বহু বহু স্থাপনা রয়েছে দেখার মতো। পৃথিবীর সৌন্দর্য্যপিপাসুদের কাছে ইতালি বারবার কাছে টানা এক দেশ।
গ্রিস
এবারে দেশটির নাম গ্রিসে। সাদা-স্বচ্ছ্ব পানি, সাদা বালির সৈকত এবং মনোমুগ্ধকর গ্রামগুলোর জন্য, গ্রিস সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। সান্তোরিনি এবং মাইকোনোসহ এর দ্বীপগুলো তাদের মনোরম দৃশ্য এবং শ্বাসরুদ্ধকর সূর্যাস্তের জন্য বিশেষভাবে বিখ্যাত।
গ্রিস তার প্রাচীন ইতিহাস এবং পৌরাণিক কাহিনীর জন্যও বিখ্যাত। ‘অ্যাক্রোপলিস’ ও ‘পার্থেনন’ দেশটির সবচেয়ে বিখ্যাত দুই ল্যান্ডমার্ক। গ্রিক দ্বীপগুলোর ওপর সফেদ-শুভ্র ভবন আর নীচে ফিরোজা রঙের পানি যেন স্বর্গীয় কোনো দৃশ্যের জন্ম দেয়।
সুইজারল্যান্ড
চ্যাট জিপিটি জানাচ্ছে, এবারের দেশটির নাম সুইজারল্যান্ডে। দেশটি তুষার-ঢাকা পাহাড়, স্ফটিক-স্বচ্ছ হ্রদ এবং অত্যাশ্চর্য আলপাইন বনের জন্য পরিচিত। দেশটিতে ইউরোপের সবচেয়ে মনোরম শহর ও গ্রাম রয়েছে, যেমন ইন্টারলেকেন এবং লুসার্ন।
সুইজারল্যান্ড চকলেট, পনির এবং ঘড়ির জন্য বিখ্যাত। আল্পস পর্বতমালার ‘সুইজারল্যান্ড-ইতালি’ সীমান্তে অবস্থিত ৪,৪৭৮ মিটার ম্যাটারহর্ন পুরো বিশ্বের এক অত্যাশ্বর্য প্রাকৃতিক দৃশ্য। এছাড়া অ্যালেশ হিমবাহ, শীতকালীন ক্রীড়া স্কিইং এবং স্নোবোর্ডিংয়ের জন্য দারুণ জনপ্রিয় এই দেশ।
স্পেন
তালিকার চতুর্থ স্থানে রয়েছে স্পেন। কোস্টা দেল সোলের অত্যাশ্চর্য সৈকত থেকে শুরু করে বার্সেলোনা এবং মাদ্রিদের ঐতিহাসিক শহর পর্যন্ত স্পেনে প্রত্যেকের জন্য কিছু না কিছু আছে। দেশটি তার প্রাণবন্ত সংস্কৃতি, সুস্বাদু খাবার এবং রঙিন উৎসবের জন্যও পরিচিত।
এখানে দেখা মিলবে ফ্ল্যামেনকো নাচ, ষাঁড়ের লড়াই এবং পায়েলার মতো দেশটির বিখ্যাত ও ঐতিহ্যবাহী খাবার। বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোর গুয়ের্নিকা এবং সালভাদর দালির দ্য পারসিস্টেন্স অফ মেমোরির মতো চিত্রকর্ম বিশ্বেই বিরল। এই দুই প্রতিভাবান শিল্পীর জন্ম স্পেনে। তাদের বিখ্যাত কিছু শিল্পকর্মের সংগ্রহশালা এই দেশে রয়েছে।
নরওয়ে
এরপরের দেশটির নাম নরওয়ে। রূপকথার মতো চিত্রকল্পের এক দেশ নরওয়ে। দীর্ঘ উপকূলরেখা, সুবিশাল fjords এবং অবাক করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নরওয়ে।
দেশটিতে উত্তরীয় আলো এবং মধ্যরাতের সূর্যসহ বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্যও বিখ্যাত। নরওয়ে সুখ ও শান্তির দেশ। বেশ কয়েকবার বিশ্বের সবচে সুখী দেশ হিসেবেও প্রথম হয়েছে নরওয়ে।
পর্তুগাল
চ্যাট জিপিটির তথ্য ধরে এবারের দেশটির নাম পর্তুগাল। প্রকৃতিগতভাবে নানা বৈপরীত্য দিয়ে সাজানো পর্তুগাল।
একদিকে এর রুক্ষ উপকূলরেখা, অদ্ভুত মাছ ধরার গ্রাম এবং মহাজাগতিক শহর; অন্যদিকে সাজানো গোছানো আধুনিক শহরের ছড়াছড়ি। এই দেশের সৈকতগুলি যেন তাদের অপার রূপ মেলে ডাকে। সেখানকার স্ফটিক-স্বচ্ছ জল থেকে চোখ সরানো কঠিন।
পর্তুগাল ওয়াইনের জন্য পরিচিত। ডুরো উপত্যকা একটি প্রধান ওয়াইন উৎপাদনকারী অঞ্চল। দেশটির আলগারভ একটি বিশেষ জনপ্রিয় গন্তব্য। রাজধানী শহর লিসবনে জেরোনিমোস মনাস্ট্রি এবং বেলেম টাওয়ারসহ বেশকিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
ফ্রান্স
চ্যাট জিপিটি যখন মনোযোগ দিয়ে স্ক্রিপ্টটি লিখছিলো, আমি ভাবছিলাম ফ্রান্সের নাম আসে না কেন? অবশেষে এলো।
ফ্রান্স তার বিখ্যাত স্থাপত্যশৈলী, মনোমুগ্ধকর গ্রাম এবং বিশ্ব-বিখ্যাত খাবারের জন্য পরিচিত। দেশটি প্যারিস, নিস এবং লিয়নসহ ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর কয়েকটি শহর ধারণ করে আছে।
ফ্রান্স আইফেল টাওয়ার এবং নটরডেম ক্যাথেড্রালসহ আরো অনেক স্থাপত্যের জন্য পরিচিত। পুরো বিশ্ব থেকে কোটি কোটি পর্যটক দেশটিতে ভ্রমণ করে থাকেন। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি আছে ফ্রান্সের। দেশটির সুস্বাদু ওয়াইন, ফরাসি রন্ধনপ্রণালী ও ফরাসী সুগন্ধীর কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
অস্ট্রিয়া
ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর দেশের তালিকায় এবার রয়েছে অস্ট্রিয়ার নাম। অস্ট্রিয়া শ্বাসরুদ্ধকর পর্বতমালা, মনোমুগ্ধকর শহর এবং বিশ্বমানের স্কিইংয়ের দেশ। এছাড়াও দেশটিতে ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত কিছু প্রাসাদ এবং দুর্গ রয়েছে, যেমন ভিয়েনার শোনব্রুন প্রাসাদ এবং সালজবার্গের হোহেনসালজবার্গ দুর্গ।
আর অস্ট্রিয়ার মাইলের পর মাইলজুড়ে আলপাইনের বন, অস্ট্রিয়ান আল্পস পর্বত ইত্যাদি প্রাকৃতিক দৃশ্যের আকর্ষণ এড়ানো কঠিন।
ক্রোয়েশিয়া
চ্যাট জিপিটি এবার যে দেশটির কথা বলছে, তার নাম ক্রোয়েশিয়া। এই দেশ কেন বিশ্ব পর্যটকদের কাছে প্রিয় গন্তব্যস্থান, তার অনেকগুলো কারণ আছে। এই দেশের সমুদ্র উপকূল আপনাকে বিমোহিত করবে। এর স্বচ্ছ পানি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাবে হৃদয় দিয়ে। এছাড়া দেশটির মনোমুগ্ধকর সব শহর ও গ্রাম; এখানকার মানুষ আপনাকে বেধে রাখবে বড্ড মুগ্ধতায়। হাভার এবং কোরচুলা দ্বীপ, ডালমেশিয়ান উপকূল, প্লিটভাইস লেক জাতীয় উদ্যান এবং ক্রকা জাতীয় উদ্যানের মতো আকর্ষণীয় অনেক স্থান রয়েছে দেশটিতে।
নেদাররল্যান্ডস
এই তালিকার সবশেষ বা দশম দেশটির নাম নেদারল্যান্ডস। দেশটি হল্যান্ড নামেও পরিচিত। এই দেশের প্রতিটি শহর মনমুগ্ধকর, প্রতিটি স্থাপনা আভিজাত্য আর ঐতিহ্যের স্মারক।
রূপমুগ্ধ টিউলিপের ক্ষেত, মনোরম উইন্ডমিলের দেশ নেদারল্যান্ডস। দেশটি তার সাইক্লিং সংস্কৃতির জন্যও বিখ্যাত। দুই চাকায় ভর কের ঘুরে আসতে পারেন ডাচ পল্লী।
দেশটিতে ভ্যান গগ মিউজিয়াম এবং রিজকসমিউজিয়ামসহ কিছু সুন্দর জাদুঘর রয়েছে। রাজধানী শহর আমস্টারডাম তার মনোরম খাল এবং ঐতিহাসিক ভবনগুলির জন্যও বিখ্যাত।
চ্যাট জিপিটি যে দেশগুলোকে ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর দেশ বলছে, সে বিষয়ে আপনার কী মত? মানে আপনার চোখে ইউরোপের সুন্দর দেশ কোনগুলো? লেখার নীচে মন্তব্য করুন।
মাহমুদ শাওন