বাড়ির আঙিনায় সারি সারি সিমেন্টের তৈরী রিং পাশাপশি কয়েকটি পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি চৌবাচ্চায় রঙিন মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন দিনাজপুর সদরের যুবক ইয়াসিন আলী রাকিব (২৫)।
২০২০ সালে মাত্র ৩৫০ টাকা দিয়ে শুরু করে এখন প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেন তিনি। পুঁজি দাঁড়িয়েছে এখন ছয় লাখ টাকা। প্রতিমাসে তার আয় হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা ।
রঙ্গিন মাছ চাষী ইয়াসিন আলী রাকিব দিনাজপুর সদরের ১ নম্বর চেহেলগাজী ইউনিয়নের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে কর্ণাই হাজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের ছোট ছেলে। ৩ বছর আগে দিনাজপুর শহরের একটি দোকান থেকে ৩০০ টাকায় চারটি গাপ্পি মাছ ও ৫০ টাকার খাবার ক্রয় করে রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। রঙ্গিন মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় বেসরকারি চাকরি ছেড়ে এখন নিজ বাড়ীতে তৈরি প্রতিষ্ঠান ইয়াছিন আলী রাকিব অ্যাকোয়া ফার্মে সময় দিচ্ছেন। এখন তা স্ত্রীসহ সে নিজে রঙ্গিন মাছ চাষে সময় দিচ্ছেন ।
ইউটিউবে রঙিন মাছ চাষ দেখে তার ভালো লাগে। প্রথমে চারটি রঙিন মাছ কিনে পরিত্যক্ত একটি মাটির হাড়িতে শুরু করেন চাষ। পরে তিনি দেখলেন সেখান থেকে আটটি পোনা পাওয়া গেছে। এরপর তা বাড়তে থাকে। পরে তিনি সেই মাছগুলো সিমেন্ট–বালু দিয়ে তৈরি রিংয়ের মধ্যে ছেড়ে দেন। এভাবে একপর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে রঙিন মাছ চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন রাকিব। কিন্তু অ্যাকুরিয়াম কেনা বা পাকা চৌবাচ্চা তৈরিতে অনেক খরচ, যা তার পক্ষে যোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই বুদ্ধি খাঁটিয়ে বাড়ির আঙিনায় পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করেন চৌবাচ্চা। সেই সঙ্গে রিং দিয়ে তৈরি হাউজে শুরু করেন রঙিন মাছ চাষ। আর এতেই দেখা মেলে সফলতার। এখন তার বাড়ির আঙিনায় সাতটি প্লাস্টিকের তৈরি চৌবাচ্চা, বেশ কয়েকটি রিং এ রয়েছে ১৫ প্রজাতির রঙিন মাছ। এই মাছ বিক্রি করে সংসারের খরচ চালিয়েও এখন তার পুঁজি দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ টাকায়।
তার প্লাটিকের চৌবাচ্চা ও রিং মধ্যেই চাষ হচ্ছে রঙ্গিন মাছ । রাকিবের চাষ করা মাছের মধ্যে গাপ্পি, মারবেল মলি, হোয়াইট মলি, ব্ল্যক মলি, প্লাটি, সোর্ড টেইল, ফাইটার, কৈ কার্প, জেব্রা, কমেট, সরটেইল, গোল্ড ফিস, ক্ল্যাকমর, চিকলেট, টেট্রা অন্যতম।
রাকিব বলেন ইউটিউব দেখের পর নিজ উদ্যোগে শহরের একটি দোকান থেকে ৩০০ টাকায় চারটি গাপ্পি মাছ ও ৫০ টাকার খাবার ক্রয় করে এই রঙ্গিন মাছ চাষের যাত্রা। বাড়িতে ছোট একটি চাড়িতে পানি দিয়ে চাষ শুরু হয়। এরপর মাছগুলো যখন পোনা দিতে শুরু করে তখন সিদ্ধান্ত নিই এই রঙিন মাছের চাষ আরও বাড়াবো। এখন পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা আর সমর্থন রঙ্গিন মাছ চাষে আগ্রহ বেড়ে গেছে ।
তিনি বলেন, এখন আমার ৯ শতাংশ জমিতে বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে সাতটি চৌবাচ্চা এবং বেশ কয়েকটি রিং, প্লাস্টিকের বালতি ও হাড়িতে মাছ আছে। এই চৌবাচ্চাগুলো পাকা তৈরি করতে গেলে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হতো। অথচ আমার সব মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এই চৌবাচ্চাগুলো যেন ভরে না যায়, সেজন্য নিচে বিশেষ ব্যবস্থায় প্লাস্টিকের পাইপ লাগানো আছে। ট্যাংকের পানি যেমন ওভার ফ্লো হলে বেরিয়ে যায়, তেমনি আমার এই চৌবাচ্চাগুলো থেকেও পানি বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ওপরে রয়েছে নেট। যাতে করে গাছের পাতা বা ময়লা আবর্জনা না পড়ে।
দিনাজপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আন্না রানী দাস দীপ্ত নিউজকে বলেন, এই উপজেলায় আরোও চার–পাঁচটি রঙ্গিন মাছ চাষ উদ্যোক্তার যাত্রা শুরু করেছে । তার মধ্যে রাকিবের এই রঙিন মাছ চাষের খামারটি অনেক বড়। এখানে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ প্রকার রঙ্গিন মাছ চাষ হচ্ছে। এই রঙিন মাছ এখানেই বংশ বিস্তার করছে। আমাদের মৎস্য অফিস থেকে সকল ধরনের প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
সুলতান মাহমুদ/মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ