বিশ্ব অর্থনীতির দুই প্রধান শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার শুল্কযুদ্ধ আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এবার চীনা পণ্যের ওপর ১০০ বা ২০০ নয় শুল্কহার বাড়িয়ে ২৪৫ শতাংশ করেছে ওয়াশিংটন।
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি চীনা পণ্যের ওপর আরও বাড়তি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছে।
হোয়াইট হাউসের বক্তব্যে বলা হয়, চীন যেহেতু পাল্টা শুল্ক আরোপ করে মার্কিন পণ্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে, তাই তারা এখন থেকে ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্কের মুখোমুখি হবে। এর আগে চীনা পণ্যের ওপর শুল্কহার ছিল ১৪৫ শতাংশ।
তারা এই পদক্ষেপকে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট ট্রেড পলিসির‘ অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করেছে, চীন ইচ্ছাকৃতভাবে সামরিক, মহাকাশ ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উচ্চ–প্রযুক্তি উপকরণ, যেমন গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম এবং অ্যান্টিমনি সরবরাহ সীমিত করছে। সম্প্রতি চীন ছয়টি ভারী বিরল মৃত্তিকা ধাতু ও বিরল মৃত্তিকা চুম্বকের রপ্তানি স্থগিত করেছে।
চীন–যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যযুদ্ধ বাংলাদেশসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর জন্য তৈরি করেছে নতুন সুযোগ।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকেরা বলছেন, উচ্চ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অধিকাংশ পণ্যে চীনের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা থাকবে না। ফলে চীন থেকে মার্কিন ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ক্রয় আদেশ সরিয়ে নেবে। সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগও স্থানান্তরিত হবে। এই সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে চীন। তারপর রয়েছে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির একক বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে রপ্তানি হওয়া পণ্যের মধ্যে ৮৭ শতাংশ তৈরি পোশাক।
ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে দাঁড়াত ৫২ শতাংশ। পাল্টা শুল্ক স্থগিত হওয়ায় আগামী তিন মাস ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক থাকছে। তাতে গড় মোট শুল্ক হবে ২৫ শতাংশ। তার বিপরীতে চীনের পণ্যে নতুন শুল্ক বসেছে ১৪৫ শতাংশ।
ফলে চীনের অনেক বিনিয়োগকারী মার্কিন শুল্কের হাত থেকে রেহাই পেতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। খুব শিগগিরই চীনের দুইশ বিনিয়োগকারীকে নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী। এই বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে সব ধরনের চেষ্টা চালাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে চায়না ইকনোমিক জোনে বিনিয়োগ করলে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং চীনের ব্যবসায়ীরা কম শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে। এখন প্রশ্ন, বাংলাদেশ কি এই সুযোগ নিতে প্রস্তুত?