স্বপ্ন দেখা সহজ, কিন্তু তা বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রয়োজন সাহস, ধৈর্য এবং সীমাহীন শ্রম। তেমনই এক অনুপ্রেরণার নাম ‘চারুতা’। শুধু একটি অনলাইন জুয়েলারি ব্র্যান্ড নয়, এটি হয়ে উঠেছে একজন নারী উদ্যোক্তার আত্মবিশ্বাস, শিকড়ের প্রতি ভালোবাসা এবং নারীদের সৌন্দর্যচর্চার এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয়।
অভিজ্ঞতা থেকেই উদ্যোগ:
২০২৩ সালে তানিয়া বায়জিদ যখন ‘চারুতা‘ শুরু করেন, তখন তার চোখে ছিল বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত নারীদের অসন্তুষ্টি—চাইলে ভালো মানের গহনা পাওয়া যায় না, যা পাওয়া যায় তার মানে গলদ কিংবা প্রতারণার আশঙ্কা। এই অভিজ্ঞতা থেকেই জন্ম নেয় চারুতা। তানিয়া ভাবলেন, “যদি সঠিকভাবে গহনা সিলেক্ট করে, সুন্দর প্যাকেজিং করে এবং ঠিকঠাকভাবে ডেলিভারি দেওয়া যায়, তবে কেনাকাটা হতে পারে আনন্দের এক অভিজ্ঞতা।”
নামের পেছনের গল্প:
‘চারুতা’ শব্দের অর্থই সৌন্দর্য, শুদ্ধতা ও শিল্প। বাংলাভাষার প্রতি ভালোবাসা থেকেই তানিয়া তার ব্র্যান্ডের নাম বাংলাতেই রেখেছেন। তার ভাষায়, “আমি চাই, আমাদের প্রতিটি পণ্য মানুষকে মনে করিয়ে দিক – সৌন্দর্য মানেই জটিল নয়, সহজের মধ্যেই আলাদা কিছু লুকিয়ে থাকে।”
চারুতার নিজস্বতা:
চারুতার সবচেয়ে বড় শক্তি এর স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতা। প্রায় ৯৯ শতাংশ কনটেন্ট নিজস্বভাবে তৈরি হয়। তানিয়া নিশ্চিত করেন, “কাস্টমার যেটা অনলাইনে দেখছেন, সেটাই হাতে পাচ্ছেন।” প্রতিটি পণ্য তিনি নিজে হাতে চেক করেন, প্রিমিয়াম প্যাকেজিং করেন, এবং কাস্টমার কেয়ারেও রাখেন সর্বোচ্চ মনোযোগ।
জনপ্রিয় কালেকশন ও অনন্য ডিজাইন:
জার্মান সিলভার, অক্সিডাইস ও পিতলের গহনা চারুতার সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় কালেকশন। পাশাপাশি বিয়ে বা অনুষ্ঠানের জন্য ভারী গহনা থেকে শুরু করে প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য হালকা ও স্টাইলিশ ডিজাইন—সবই পাওয়া যায় এক প্ল্যাটফর্মে।
একা হাতে এক সাম্রাজ্য:
নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তানিয়া বায়জিদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, একসঙ্গে সব সামলানো। প্রোডাক্ট সিলেকশন, কনটেন্ট তৈরি, মার্কেটিং, প্যাকেজিং, ডেলিভারি—সবই তিনিই দেখতেন। “পরিবারকে সময় দেওয়া আর কাজের ফোকাস ধরে রাখা সহজ ছিল না,” জানালেন তিনি। তবে কাস্টমারদের ভালোবাসাই তাকে বারবার সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয়।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন:
তানিয়া বায়জিদের স্বপ্ন, চারুতা একদিন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য জুয়েলারি ব্র্যান্ডে পরিণত হবে। অনলাইন ছাড়াও নিজস্ব শোরুম খোলার ইচ্ছাও আছে তার। তবে লক্ষ্য একটাই—“চারুতার মাধ্যমে দেশের প্রতিটি নারী যেন আরও আত্মবিশ্বাসী ও সুন্দর অনুভব করতে পারেন।”
চারুতার অনুপ্রেরণা:
তানিয়ার মূল প্রেরণা সাধারণ নারী, যারা সামান্য কিছু কিনেও আনন্দ পান। সেই হাসি, সেই সন্তুষ্টিই তার সবচেয়ে বড় শক্তি। তিনি বলেন, “কাস্টমার যখন বলে, ‘আপুর কাছ থেকে নিলে ঠকতে হয় না’, তখন মনে হয় সব পরিশ্রম সার্থক।”
পেশাদারিত্ব:
তানিয়া নিজেই ফটোগ্রাফি করেন, কনটেন্ট প্ল্যান করেন। প্রতিটি পোস্ট মাসের শুরুতেই পরিকল্পনা করা হয়—কোন কালেকশন কবে আপলোড হবে, কোন অফার কখন চলবে, কীভাবে লাইভে আসা হবে—সবকিছুতেই তিনি রাখেন নিখুঁত পরিকল্পনা।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বার্তা:
“শুরুতেই লাভের পেছনে না ছুটে কাস্টমারের বিশ্বাস অর্জনে মনোযোগ দাও” পরামর্শ তানিয়ার। তার মতে, ধৈর্য আর নিয়মিত পরিশ্রম থাকলে সফলতা আসবেই।