শুক্রবার, অক্টোবর ১৭, ২০২৫
শুক্রবার, অক্টোবর ১৭, ২০২৫

চট্টগ্রাম ইপিজেড ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকায় আগুন লাগা সাততলা ভবনটির অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

কারখানার আগুন দীর্ঘ ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসার পর ভবনটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও ইপিজেড কর্তৃপক্ষ দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বিষয়টি জানান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফায়ার সেফটি প্ল্যানের (অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা) আবেদন করা হয়েছে কেবল। তবে, নিয়ম অনুযায়ী এখনো পরিদর্শন হয়নি। তার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।’

ভবনটিতে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ভবনের দুই পাশ দিয়ে আগুন নেভানোর সুযোগ ছিল না। অন্য দুই পাশ থেকে চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, ভবনের আশপাশে যে ন্যূনতম জায়গা রাখতে হয়, সেটি দুই দিকে ছিল না।

ইপিজেডের সব ভবন দ্রুত কমপ্লায়েন্স ভবনে রূপান্তর করে কার্যকারিতা সনদ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড শুধু কারখানা মালিকের নয়, দেশের জন্য ক্ষতি। এ ধরনের ক্ষতি চাই না। সিজন খারাপ। দ্রুত আগুন লেগে যাবে। সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসুন। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। তখন আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যাবে।

ভবনটির কলাম, কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এ ভবনে কেউ যেন না প্রবেশ করে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। ভবনের সামনে ব্যানার দিতে অনুরোধ জানিয়েছি। সার্ভে করার পর ভবনটি অপসারণ করা হবে কি না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ভবনটি বহুমুখী কাজে ব্যবহৃত হতো উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চারটি ফ্লোরে গুদাম ছিল। ডাক্তারদের গাউন তৈরি হতো।

দাহ্য পদার্থ পুড়তে সময় লেগেছে। ভবনটি দু’দিকে খোলা। পাশের ভবন ছিল খুবই কাছে। তাই আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। ভবনটি কোড মেনে করা হয়নি। তাই ফায়ার ফাইটাররা পৌঁছাতে পারেননি।

সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। আগুন লাগার পর এলাকাটি কর্ডন করা এবং শ্রমিকদের নিরাপদে নিয়ে আসা আমাদের প্রথম কাজ। ইনজুরি ও ক্যাজুয়ালিটি ছাড়া শ্রমিকদের বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। আমাদের সব প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরুর আগে ফায়ার কমপ্লায়েন্স সনদ নিতে হয়। এ ভবনও কমপ্লায়েন্সের আওতায় ছিল। কিছুদিন আগে শ্রমিকদের ফায়ার ড্রিল (মহড়া) করানো হয়।

বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ফায়ার কনসালটেন্টের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দেবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে সিইপিজেডের একটি সাততলা ভবনে আগুন লাগে। ভবনের সাততলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত। সেখানে অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড নামে দু’টি কারখানার গুদাম ছিল। অ্যাডামস তোয়ালে, ক্যাপ এবং জিহং মেডিকেল সার্জিক্যাল গাউন তৈরির কারখানা।

সাততলার গুদাম থেকে পরে পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় সাড়ে ১৭ ঘণ্টা পর আজ শুক্রবার সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় ২৫টি ইউনিট এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৪টি ইউনিট কাজ করেছে।

ভেতরে থাকা দাহ্য কাঁচামালের কথা স্বীকার করে জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস (বিডি) কোম্পানি লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী বোরহান উদ্দিন তামিম বলেন, ভেতরে রপ্তানির জন্য ১০ কনটেইনার তৈরি সার্জিক্যাল গাউন ছিল। এছাড়া গাউন তৈরির কাঁচামাল (ফেব্রিকস) ছিল ২০ কনটেইনার। এগুলো কিছুটা দাহ্য। তাই আগুন ছড়িয়ে গেছে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের একপাশে দেয়াল ধসে গেছে। আগুনের তাপে গলে গেছে লোহা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের তখনো ভবনে পানি দিতে দেখা যায়।

স্থানীয় একটি কারখানার নিরাপত্তাকর্মী আবদুল্লাহ বলেন, সারা রাত আগুন জ্বলেছে। ছাদ ভেঙে পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সকাল ৭টার দিকে আগুনের ভয়াবহতা কিছুটা কমে।

আরও পড়ুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More