আশির দশক পর্যন্ত বাংলায় গরু, লাঙ্গল, জোয়াল ও মইয়ের প্রচলন ছিল খুব বেশি। গ্রাম্য কৃষকরা কাক ডাকা ভোর হতেই জমিতে চাষ জুড়ে দিতেন। একজন হাল বাইতে যাওয়ার সময় পাশের কৃষকদেরও ডেকে নিয়ে যেতেন। সূর্য উঠার পূর্বেই হাল চাষ শেষ করা হতো। কোন কৃষকের একটা গরু দুর্বল হলে সাথে সাথেই সাহায্যকারী হিসেবে মানুষ জুড়ে দেওয়া হতো।
যদিও কালের পরিক্রমায় এগুলো এখন বিলুপ্তির পথে। আধুনিক উৎকর্ষতার এই যুগে নানা রকম যন্ত্রপাতি দিয়ে কৃষি কাজ করা হলেও ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষের দৃশ্যবিরল! এমনি দৃশ্য মেলে মুরাদনগর উপজেলার পাঁকদেওড়া গ্রামে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে জয়দল মিয়ার ছেলে হেলাল উদ্দিন ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ঘোড়া গরুর চেয়ে শক্তিশালী হওয়ায় তার উপর সওয়ার হয়ে জরুরি কাজ কর্ম ও সেরে নেন তিনি। ঘোড়া দিয়ে নিজের জমি চাষাবাদের পাশাপাশি অন্যের জমি চাষ করে ভালো মুনাফা অর্জন করছেন।
কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, একটি গরুর দাম দিয়ে চারটি ঘোড়া কিনছি। আগে হালের গরু ছিল, এখন নেই। বাজারে গরুর দাম বেশি হওয়ায় কেনার সামর্থ্যও নেই তাই ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছি। শুধু নিজের জমিতে চাষাবাদ করছি না, অন্যের জমিতেও টাকার বিনিময়ে চাষ করে দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এক বিঘা জমি চাষ দিতে নেয়া হয় ৮শা থেকে ১ হাজার টাকা। গৃহস্থের কাজ থাকলে প্রতিদিন দুই বিঘা জমি হালচাষ করতে পারি। এছাড়াও নানা রকম বোঝা বহনের কাজে আমি ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করে থাকি। এরা আমার সন্তানের মতোই কাজে আসে।
মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাবেল খান পাপ্পু বলেন, কৃষির প্রতি কৃষকের আগ্রহ থেকে তিনি ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করছেন। তবে বিষয়টি চমকপ্রদ।
তিনি বলেন, ‘আমি কৃষক হেলাল উদ্দিনের বাড়ি যাবো।‘
ঘোড়া নিয়ে চাষাবাদে কৃষকের যদি লাভ হয় তাহলে মুরাদনগর উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের ঘোড়ার প্রতি উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন তিনি।
আফ/দীপ্ত সংবাদ