উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের কবলে পরে মারা গেছে সুন্দরবনের অসংখ্য হরিণসহ বিভিন্ন বণ্যপ্রাণী। এ পর্যন্ত সুন্দরবনের কটকা এলাকা থেকে ৩০টি মৃত হরিণ উদ্ধার করেছে বনবিভাগ। এখনো বনজুড়ে তল্লাশি অব্যাহত।
মৃত হরিণসহ অন্যান্য বণ্যপ্রাণীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ। এছাড়াও আহত অবস্থাও উদ্ধার করা হচ্ছে হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী। এছাড়া রেমেলের তাণ্ডবে বনের অভ্যন্তরে ২৫টি টহল ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুন্দরবনের ৮০ মিঠা পানির পুকুর ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লবণ পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে বনকর্মীদের পাশাশাশি বাঘ, হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে।
খুলনাঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব ও জ্বলোচ্ছাসে সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে বিশেষ করে বনের অনেক হরিণ মারা গেছে। এ পর্যন্ত বনের শুধু কটকা এলাকা থেকে ৩০ মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত বন্যপ্রাণীর সন্ধানে বনজুড়ে বনরক্ষীদের তল্লাশি চলছে। তল্লাশিতে আরও মৃত বন্যপ্রাণী উদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, বনের গাছপালারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে বনবিভাগের বিভিন্ন অফিসসহ টহলবোট, টিনের চালা, জানালা–দরজা, সোলার প্যানেল ও অবকাঠামোর। কটকা অভয়াণ্যের অফিস ঘাটের জেটি ও পুকুর বঙ্গোপসাগরের গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। দুবলা, কটকা, কচিখালি, বগি ও বিভিন্ন অফিসসহ ২৫টি টহলফাঁড়ির রান্নাঘরসহ অবকাঠামোর টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। সুন্দরবনে অভ্যন্তরের মিঠা পানির পুকুরগুলোও জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের ৮০টি মিঠা পানির উৎস পুকুরে ৮থেকে ১০ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে তলিয়ে যাওযায় বনকর্মীদের পাশাশাশি বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণীরাও সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে এখানকার পর্যটক চলাচলের কাঠের পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে তছনছ হয়েছে অসংখ্য গাছপালা।
এদিকে, রিমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছে বাগেরহাট জেলার ৪৫ হাজার ঘরবাড়ি। এর মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজার বাড়িঘর। উপড়ে পড়েছে কয়েক হাজার গাছপালা। এখনও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে জেলার প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মৎস্য ঘেরে। জেলার ৪২ হাজার চিংড়ি ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১ হাজার ৫৮১ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এজে/মামুন আহমেদ/বাগেরহাট/দীপ্ত সংবাদ