বুধবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৫
বুধবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

গ্যাস ফিল্ডে ৪০ বছরেও নিমার্ণ হয়নি বর্জ্য পরিশোধনাগার

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় ১৯৮৪ সালে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী (বিজিডিসিএল)’র গ্যাস কূপ থেকে অনুষ্ঠানিক ভাবে গ্যাস উত্তোলন শুরু করা হয়। ৪০টি বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এতে করে এ ফিল্ড থেকে উত্তেলনকৃত ডিজেল ও পেট্রোলের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ফিল্ডের বাহিরের একটি পুকুরে। বছরের পর বছর এ পুকুরে বর্জ্য ফেলায় জনস্বাস্থ্য ও কৃষি জমি ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

বর্ষা মৌসুমে পুকুরে ফেলা বর্জ্য এলাকার খাল ও বিভিন্ন পুকুরে মিলিত হচ্ছে। আর দুর্গন্ধযুক্ত খালের কালচে পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করায় নষ্ট হচ্ছে ফসল। মারাত্মক দূষণের কারণে এলাকার পুকুরজলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে। আর খালের পানিতে মেশা বর্জ্যের দুর্গন্ধে এলাকার মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। গ্যাস ফিল্ডে বর্জ্য শোধনাগার না থাকায় মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখেও পড়েছে এই এলাকার জীববৈচিত্র্য।

পরিবেশ অধিদপ্তর আইনে বলা হয়েছে, প্রতিটি কলকারখানার কেমিক্যালযুক্ত এই বর্জ্যপানি পরিশোধন করতে হবে এবং পরিশোধনকৃত পানি আবার কাজে লাগাতে হবে। এজন্য ব্যবহার করতে হবে তরল পানি বর্জ্য শোধনাগার বা এ্যাফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি)। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীতে এই ইটিপি প্ল্যান্ট না থাকার কারনে বছরের পর বছর দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী সূত্রে জানা যায়, তিতাস ও হবিগঞ্জের মতো ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান শেল অয়েল কোম্পানি লিমিটেড বাখরাবাদ গ্যাস ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করে। ১৯৮৪ সালে বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্র হতে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়। পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, বাখরাবাদ ফিল্ডের মোট উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ ১,৩৮৭ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। গ্যাসের উপজাত হিসেবে দৈনিক প্রায় ৩৬.৮৩ ব্যারেল কনডেনসেট (জ্বালানী তেলের) উপাধান উৎপাদিত হয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ গ্যাস ক্ষেত্রে কনডেনসেট ও গ্যাসের গড় অনুপাত এবং পানি ও গ্যাসের গড় অনুপাত যথাক্রমে ১.১৫৫ ব্যারেল মিলিয়ন ঘনফুট এবং ৯.৯২৫ ব্যারেল মিলিয়ন ঘনফুট ছিল। এখানকার কন্ডেনসেট (তেলের উপাধান) প্রক্রিয়াজাত করে পেট্রোল ও ডিজেল তৈরি করা হয়। যা মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড বাজারজাত করে থাকে।

দিকে বাখরাবাদ গ্রামের বাসিন্দা মো: খোকন বলেন, গ্যাস ফিল্ডের পশে আমার বাড়ি। বাখরাবাদ ফিল্ডের পশের একটি পুকুরে পানি বর্জ্য ফেলার কারনে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ওই বর্জ্যরে পুকুরের পানির দূর্গন্ধে আশপাশের মানুষ অতিষ্ট। এখানে যে পুকুরটিতে পানি বর্জ্য ফেলা হয় সে পানির দুর্গন্ধে আশপাশে পশুপাখি যেতে পারে না। বর্ষার মৌসুমে এ বর্জ্য পানি আশপাশের পুকুরের পানিতে মিশ্রিত হয়ে স্থানীয়দের স্বাস্থ্যেও জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে।

অন্যদিকে ছয়ফুল্লাহকান্দি গ্রামের মো: সোহাগ বলেন, গ্যাসফিল্ডের কর্মরত কর্মকর্তারা আমাদের মানুষ মনে করে না। কয়েকমাস পরপর এ গ্যাসফিল্ডের ওভার গ্যাস শূন্যে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ওই সময় বিকট শব্দ হয় । কয়েকঘন্টা যাবত এ কার্যক্রম চলে যার কারনে শিশুরা আতঙ্কে থাকে। এবং খোলা পুকুরে বর্জ্য পানি ফেলার কারনে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এখানে থাকা বর্জ্যরে দুর্গন্ধে স্থানীয়রা নানা সমস্যায় ভোগে। পানি বর্জ্য পরিশোধনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাই।

এদিকে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর উপমহাব্যবস্থাপক মো: জিয়াউল কবীর বলেন, আমাদের ফিল্ডের বর্জ্য পরিশোধন হয়ে পুকুরে যায়। যে পুকুরটিতে বর্জ্য ফেলা হয় সেটি আমাদের নিজস্ব পুকুর। ওই পুকুরটির চারপাশে আমরা আরসিসি পেলা সাডিং ওয়াল নির্মান করা আছে। যার কারনে পুকুরের বর্জ্য অন্য কোনো পুকুরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া আমরা ইটিপি প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। শিগ্রই টেন্ডারের মাধ্যমে ইটিপি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে।  

পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক বলেন মোছাব্বের হোসেন মো: রাজিব বলেন, পুকুরে পানি বর্জ্য ফেলার বিষয়টি আমার জানা নাই। এ বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ

আরও পড়ুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More