গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরেও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরতে না পারায় ধীরে ধীরে অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘এক বছর আসলে অনেক দীর্ঘ সময়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেক আগেই দেশকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফেরানো উচিত ছিল। এই বিলম্বের কারণে, বাংলাদেশ দিন দিন অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে।’
বুধবার(৩ সেপ্টেম্বর) এক সেমিনারে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
খসরু বলেন, ঐতিহাসিকভাবে যেসব দেশ বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থানের পর নির্বাচনের মাধ্যমে দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, তারা আরও ভালোভাবে এগিয়ে যায়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যারা তা করতে ব্যর্থ হয়, তারা প্রায়শই অর্থনৈতিক পতন, সামাজিক অস্থিরতা এবং কিছু ক্ষেত্রে গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি হয়।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘যেসব দেশ তাদের অভ্যুত্থানের পরে সমস্যা তৈরি করে, বিভিন্ন দাবি ও অজুহাত তৈরি করে, তারা তাদের গণতন্ত্র হারিয়ে ফেলে এবং তাদের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যায়। এই দেশগুলোও গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছে এবং সমাজ গভীরভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এ কারণেই আর বিলম্ব না করে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খসরু বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং নির্বাচিত সরকারের অনুপস্থিতির কারণে পরিস্থিতি ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে।
তিনি অন্তর্বর্তী সরকার এবং জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব তুলে ধরে বলেন, উভয়ের মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই দূরত্বের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকারি কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন। আমরা আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নিরাপত্তার অভাব এবং এমন একটি ব্যবসায়িক পরিবেশ প্রত্যক্ষ করছি, যা আসলে কার্যকর নয়। কারখানাগুলো নতুন বিনিয়োগ পাচ্ছে না, কারণ এই অনিশ্চয়তার মধ্যে কেউ তাদের সময়, অর্থ বা সম্পদ বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়।’
রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জুলাই–পরবর্তী রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা: বাংলাদেশ কোন দিকে হাঁটছে?’ শীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে স্কুল অব লিডারশিপ ইউএসএ (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার)।
খসরু সতর্ক করে দিয়েছিলেন, সঠিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়াই দেশ ইতোমধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় হারিয়েছে, যা বাংলাদেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে আরও গভীরে ঠেলে দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলন এবং আলোচনা আয়োজন করার পরেও তিনি উল্লেখ করেছেন, দেশ প্রকৃত বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপির নেতা বলেন, ‘সাম্প্রতিক এক শীর্ষ সম্মেলনে, নতুন কোনো বিনিয়োগ করা হয়নি, যদিও বর্তমান অনেক বিনিয়োগকারী উপস্থিত ছিলেন। তবে, এখন, নির্বাচনের সময় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আশার কিছু লক্ষণ দেখতে শুরু করেছি। এটা স্পষ্ট যে বিনিয়োগকারীরা তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন। তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং নির্বাচনের পরে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
খসরু গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের মানসিকতার পরিবর্তনকে মূল্যায়ন করার জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর, বাংলাদেশের জনগণের মানসিকতায় বিশাল পরিবর্তন এসেছে। তাদের প্রত্যাশা এবং আকাঙ্ক্ষা আকাশছোঁয়া, কিন্তু আমরা যদি এই পরিবর্তনগুলো বুঝতে এবং স্বীকার করতে ব্যর্থ হই– তাহলে রাজনৈতিক নেতা এবং দলগুলোর কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না। আমরা যদি এটি স্বীকার না করি–তাহলে দল, আমার এবং দেশের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। কারো ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকবে না।
বিএনপির এই নেতা জোর দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের ভবিষ্যত রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে গণঅভ্যুত্থানের কৃতিত্ব দাবি করা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা আন্দোলনের কৃতিত্বের জন্য লড়াই চালিয়ে যাই—তাহলে বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। কৃতিত্ব জনগণের, দেশের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের, ব্যক্তিদের নয়।’
খসরু উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন ও কাজে ফিরে আসেন।
তিনি বলেন, ‘যারা সম্মুখ সারিতে লড়াই করেছিলেন তারা তাদের ভূমিকায় ফিরে আসেন। শিক্ষকরা তাদের স্কুলে ফিরে যান এবং শিক্ষার্থীরা তাদের কলেজে ফিরে যান। স্বাধীনতা সংগ্রামকে ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যবহার করার ধারণার বাইরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার দিকে মনোনিবেশ করার সময় এসেছে।’