শনিবার, এপ্রিল ১২, ২০২৫
শনিবার, এপ্রিল ১২, ২০২৫

খালের উপর তৈরি সেতু, দুই গ্রামের মানুষের নাড়ির বন্ধন

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: সর্বশেষ সম্পাদনা:

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের চুনাখালের উপরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের যুবদের উদ্যোগ নির্মিত ১৩৯ ফুট দৈর্ঘ্যের কাঠের সেতু। আর এ সেতু মজবুত করেছে দুই গ্রামের মানুষের নাড়ির সম্পর্ককে।

সেতুটি তৈরির পূর্বে পারাপারের ব্যবস্থা না থাকায় এ পারের মানুষ ওপারে যেতে পারত না। মসজিদ মন্দিরে যেতে না পারায় ব্যহত হত প্রার্থনা। দু’পারের মানুষের মধ্যে সামাজিকতা কমে গিয়েছিল দেখা সাক্ষাৎ না থাকায়। অসুস্থ্য মানুষকে হাসপাতালে নিতে ঘুরে আসতে হতো ৭/৮ কিলোমিটার রাস্তা। সেই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যবৃন্দ। নিজেদের শ্রম বৃথা যেতে না দিয়ে দৃশ্যমান করে তুলেছে কাঠের সেতুটি।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে পানখালি গ্রামে ১৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৫ ফুট প্রস্থের সেতুটি দু’পাশে দেয়া হয়েছে রেলিং। ফলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী, প্রবীণ, প্রতিবন্ধীরা নিরাপদে স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারছে।

এ ছাড়া এ সেতু পাল্টে দিয়েছে গ্রামীণ জনপদের চিত্র। বিশেষ করে কৃষক তার উৎপাদিত কৃষি পণ্য ও মাছ এ সেতুটি পার হয়ে বাজারজাত করতে পারছেন ।

সেতুটি ঘিরে উৎসবের আনন্দ বইছে এলাকাবাসীর মধ্যে। প্রতিদিন বিকেলে গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে সেতুটি দেখতে আসছে শত শত মানুষ। সেতুটিতে উঠে ছবি তুলে পোস্ট দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকের কাছে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে সেতুটি তৈরি হওয়ার মাধ্যমে।

সেতুটির অদূরে ১৮৮ নং পানখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুলের অন্তত ৭০ ভাগ শিশু খালের ওপারের গ্রাম থেকে আসতো। ফলে স্কুলটিতে উপস্থিতির হার আশংকাজনক ভাবে কমে যায়। সেতুটি হওয়ার পরে ভোগান্তি কমেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের, বেড়েছে উপস্থিতির সংখ্যাও।

পানখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মালবিকা মহালদার, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র গৌতম মণ্ডল জানান, করোনার আক্রমনের কারণে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এরপরও মড়ার উপর খাড়া হয়ে দাঁড়ায় চুনা খালের উপর দুটি বাঁশের স্যাঁকো। দুটি বাঁশের উপর দিয়ে পার হয়ে স্কুলে যেতে হতো।

চুনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মনোয়ারা খাতুন ও গুচ্ছগ্রাম কেদার বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, সেতুটি নির্মান হওয়ার আগে এক পার থেকে অন্য পারে সাইকেল, ভ্যান, মটরসাইকেল পারাপার না করতে পারায় কোন মানুষ অসুস্থ্য হলে সাত থেকে আট কিলোমিটার ঘুরে আসতে হতো। এখন আর সেই সমস্যা নেই। তারা বলেন, সেতুর কারণে মানুষের সময়, শ্রম কমেছে। আগে উপজেলা সদরে উঠতে যে সময় লাগত এখন তার চেয়ে অর্ধেক সময়ে মানুষ পৌঁছাতে পারছে। সেতুর সুফল ভোগ করছে তাদের দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিডিও ইয়ুথ টিমের প্রতিষ্ঠাতা গাজী আল ইমরান বলেন, একটি ছোট্ট উদ্যোগ হাজারো মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারে যা এই সেতুটির মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। এলাকারবাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে সিডিও ইয়ুথ টিমের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সুন্দরবন কোয়ালিশনের সহযোগিতায় আমরা দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে সমস্যা সমাধানে সেতুটি তৈরি করেছি। এর মাধ্যমে মানুষ নির্বিঘ্নে খাল পারাপার হতে পারছে। আগে এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ চুনা খাল পারাপারে ভোগান্তিতে পড়লেও তা এখন শান্তিতে পার হতে পারছে। স্বেচ্ছাসেবকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সুন্দরবন কোয়ালিশনের সহযোগিতায় আমরা সেতুটি বানাতে সক্ষম হয়েছি।

 আল / দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More