বেগম খালেদা জিয়াকে কেন বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না? তাকে ফুড পয়জনিং করেছে কিনা, কোন স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরকার পদত্যাগের ১ দফা দাবির সমাবেশের আমিনবাজার মিরপুর মফিদ ই আম কলেজের নতুন ভবনের মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ প্রশ্ন তুলেন।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নিয়ে কি করেছে, আজকে সেটি জানার বিষয় হয়ে গেছে। কেন আমাদের নেত্রীর শারীরিক অবস্থা এই জায়গায় এসে পৌছেছে তার পিছনে কারন কি? একটা প্রশ্ন কিন্তু আজকে জেগেছে, তাকে (খালেদা জিয়া) বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, এর পেছনে কারন হিসাবে অনেকে দেখছে যে তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে জেলে রাখার সময় কি খাইয়েছে, তাকে ফুড পয়জনিং করেছে কিনা, কোন স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কিনা, এই প্রশ্নগুলো কিন্তু আজ জনমনে এসেছে। বিদেশে নিয়ে গেলে পরিক্ষার মাধ্যমে সেসব বেরিয়ে আসতে পারে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সৈরাচারের প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করবে। আমরা দেখেছি তারা কত লোককে হত্যা করেছে, গুম করেছে। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিপক্ষকে জেলে ঢুকাতে হবে। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াই তার প্রধান প্রমান। কেননা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যদি বাহিরে থাকে, এই সৈরাচার এই ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হবে না।
মামলা প্রসংঙ্গে তিনি বলেন, সৈরাচার ফ্যাসিস্টের আরেকটি চরিত্র হচ্ছে, মিথ্যা মামলা, গায়েবী মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, জেলে পাঠানো, বাড়িঘর আক্রমণ করা। যাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মত করে তারা দেশটা দখল করে বসে থাকবে। তারা বিচারবিভাগকে দখল করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দখল করেছে, আজকের সরকারি কর্মকর্তাদের দখল করেছে।
তিনি বলেন, ২৫ তারিখে এইখানে সভা হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু হয়নি। পুলিশ আগের রাতে এইখানকার যেই মঞ্চ, ভেঙ্গে দিয়েছে। পুলিশের সাথে আওয়ামীলীগ ছিলো, যুবলীগ ছিলো, জয়েন্ট অপারেশন। আমি একটা কথা বলতে চাই, আজকে বাংলাদেশের বাহিরে সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশগুলো বাংলাদেশের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। আগামী নির্বাচনকে চুরি করার পথে যারা হাত বাড়াবে, তারা কেউই রেহাই পাবে না।
এসময় বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শুধু নয়, বিশ্ব আজকে বাংলাদেশকে বিশ্ব বিবেক বিশ্বের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো, দেশগুলো যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে, যারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে, যারা নির্বাচিত সরকারে বিশ্বাস করে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, প্রত্যেকে বাংলাদেশের উপর কঠিন নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে। সুতরাং এইযে সভা সমাবেশ বন্ধ করার যে প্রক্রিয়া, মঞ্চ ভেঙ্গে দেওয়ার প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত থাকবে, সবগুলো কিন্তু ডকুমেন্টেড হচ্ছে, রেকর্ড হচ্ছে নামসহ। কেউ বাদ যাবেন না কিন্তু। শুধু বিদেশীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পড়বেন না, বাংলাদেশের মানুষের নিষেধাজ্ঞায়ও পড়বেন।
কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন গণমাধ্যমতো স্বাধীন মাধ্যম, এটা কেন ভিসা নীতির মধ্যে আসবে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেন মশাই, যারা সরকারি কর্মকর্তা ভোট চুরি করবে তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা ভোট চুরি করবে তাদের উপর ভিসা নীতি আসবে, বিচারক যারা ভোট চুরির সাথে জড়িত থাকনে তাদের উপর ভিসা নীতি আসবে, আর আপনি সাংবাদিক হয়ে ভোট চুরিকে সাহায্য করবেন, আপনার উপরে এই নিষেধাজ্ঞা আসতে অসুবিধাটা কোথায়?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরো বলেন, অবস্থা বোঝেন কত খারাপ, কত খারাপ হইলে সেলফি তুলেও কাজ হচ্ছে না। সেলফি তুলে কতদিন একটু ফুরফুরে মেজাজে ছিলো। তারপর দেখা যায় আরেকটা আসছে (স্যাংকশন)। এরা যে ভুয়া তা সারা বিশ্ব বুঝে গেছে। নাহলে সব প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন, আমাদের অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সেখানে বসে বসে কি কাজ করছেন? এখনো চেষ্টা চালাচ্ছেন হাতে পায়ে ধরে কিছু করা যায় কিনা। কিন্তু কোন কাজ হবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বারবার বলা হচ্ছে, ভোট চুরির সাথে যারা জড়িত থাকবেন সরাসরি ও পরোক্ষভাবে এমনকি যারা দেখেও না দেখার ভান করছেন তারাও বাদ যাবেন না। তারা বাহিরে অনেক সাহসী, ভিতরে কিন্তু এত সাহসী না। ভিতরে সাহস থাকলে তারা ওয়াশিংটনে, জাতিসংঘে কাজ শেষ হয়ে গেছে, বক্তব্য শেষ হয়ে গেছে, বিশ্বের সব নেতারা চলে গেছে, কিন্তু আমাদের অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটনে বসে আছেন।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, পদত্যাগ করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ, গ্রহনযোগ্য, অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন করতে হবে। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার হবে, সংসদ হবে, তারা জনগণের কাছে দায়ী থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। তার আগে কোন রক্ষা নাই। এক লক্ষ কোটি টাকা টাকার উপরে শুধু বিদেশে পাচার করেছে। সেই টাকার কি হবে।
বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে আমির খশরু বলেন, আগামীতে কি করবেন আপনারা। কারো অনুমতি দরকার নেই। আমাদের নেতা তারেক রহমান পরিষ্কার ভাবে বলেছেন। তার কথা মেনেই চলবেন। আগামীতে যে কর্মসূচি আসবে, কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। রাজপথ দখল করে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে৷
সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আব্দুস সালাম আজাদ ও বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো।
ঢাকা জেলা ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক‘র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত আনো ছিলেন–
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবার ও কল্যান বিষয়ক সহ সম্পাদক ও ঢাকা ১৯ আসনের সাবেক সাংসদ ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা বিএনপির ঢাকা জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমিসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
এম এ হালিম/মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ