প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের যেকোনো দুর্ভিক্ষ ও মন্দা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে খাদ্য ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে আরো বেশি প্রচেষ্টা চালানোর জন্য যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় যুব দিবস-২০২২-এর উদ্বোধন ও জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২২ অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল প্রাপকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
প্রত্যেক পুরস্কার বিজয়ীকে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও পুরস্কারের অর্থের চেক প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন এবং দুই পুরস্কারপ্রাপ্ত জাকির হোসেন ও রিতা জেসমিন।
তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের যুবকদের তাদের নিজ নিজ এলাকায় খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য আরো উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাতে চাই। আর যদি তা করা হয় তাহলে আমরা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হব এবং অন্যান্য দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশগুলোকেও সাহায্য করতে পারব।’
তিনি বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ আঘাত হানতে পারে এবং অনেক উন্নত দেশও এখন অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে এর থেকে (যেকোনো বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ ও অর্থনৈতিক মন্দা) মুক্ত রাখতে আমাদের জমির প্রতিটি ইঞ্চি চাষ করতে হবে। এছাড়া খাদ্যপণ্য এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনে আরো পদক্ষেপ নিতে হবে’।
তিনি আরো বলেন, তরুণরা বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী শক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর এবং এর সবচেয়ে বড় শক্তি জনশক্তি। ‘আমাদের এই শক্তিকে কাজে লাগাতে হব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবকদের উপযুক্ত কর গড়ে তুলতে চাই। আর সেইদিকে লক্ষ্য রেখেই সারা দেশে আমরা হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, বিশেষায়িত ল্যাব, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছি, যেখানে আমাদের যুব সমাজ প্রশিক্ষণ নিতে পারে। কারণ আমি বিশ্বাস করি আমাদের যুব সমাজ মেধাবী এবং তারা সব কাজেই পারদর্শিতা দেখাতে পারবে।
২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহারে ‘রূপকল্প-২১’ এর মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা তাঁর সরকারের একটি লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরমাঝে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি এবং উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছি। আর এই মর্যাদা ধরে রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। পাশাপাশি ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সেজন্য সরকার ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমাদের দেশ দিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাতেই আমাদের এদেশকে গড়ে তুলতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে ১৯৭১ সালে আমাদের যুবকরাই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করেই আমাদের জন্য বিজয় অর্জন করেছে। সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের সবসময় মাথা উঁচু করে চলতে হবে।
তিনি বলেন, কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের দেশক উন্নত সমৃদ্ধ করবো নিজের শক্তি, মেধা সম্পদ দিয়ে। এই চিন্তা আমাদের যুবকদের মাঝে সবসময় থাকতে হবে। এটা সম্ভব হলেই জাতির পিতার ভাষায় ‘বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
সফল আত্মকর্মসংস্থান বিভাগে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন নোয়াখালী সদরের জাকির হোসেন (প্রথম), বগুড়ার শেরপুরের সুরাইয়া ফারহানা রেশমা (দ্বিতীয়), নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বিল্লাল মিয়া (তৃতীয়) এবং বরিশাল সদরের রিতা জেসমিন (তৃতীয়)। প্রথম এবং সেরা যুব সংগঠক বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন দিনাজপুরের বিরলে উপজেলার আবু রাসেল হুদা (দ্বিতীয়)।
এছাড়া বিভাগীয় কোটায় সফল আত্মকর্মসংস্থানকারী যুবক ও যুব সংগঠকরা পুরস্কার পেয়েছেন।