ক্রীড়াঙ্গনে নানা উত্থান–পতন, সাফল্য–ব্যর্থতা আর বিতর্কের সাক্ষী হয়ে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে বিদায় নিচ্ছে ঘটনাবহুল ২০২৫ সাল। চোখের পলকে কেটে যাওয়া এই বছরটি দেশের ফুটবলে এনে দিয়েছে নতুন আলো, নতুন প্রত্যাশা—আবার রেখে যাচ্ছে আক্ষেপের দীর্ঘ ছায়াও।
হামজা চৌধুরী, শমিত সোম ও ফাহমেদুল ইসলামের মতো প্রবাসী ফুটবলারদের আগমনে ফুটবলে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হলেও প্রত্যাশিত সাফল্য ধরা দেয়নি পুরুষ ফুটবলে। তবে নারীরা ঠিকই ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো সিনিয়র ও অনূর্ধ্ব–২০—দুটি দলই এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে।
নারী ফুটবলারদের বিদ্রোহ দিয়ে শুরু:
২০২৫ সালের শুরুটা ছিল বেশ অস্বস্তিকর। ৩০ জানুয়ারি সাবিনা, কৃষ্ণা, সানজিদা, ঋতুপর্ণাসহ ১৮ জন নারী ফুটবলার কোচ পিটার বাটলারের অধীনে খেলবেন না জানিয়ে বাফুফেতে লিখিত অভিযোগ দেন। সভাপতির মধ্যস্থতায় ঋতুপর্ণাসহ কয়েকজন ফিরলেও সাবিনা, কৃষ্ণা, মাসুরা, সানজিদা ও সুমাইয়াকে আর জাতীয় দলে ডাকা হয়নি।
এরপরও বছরটি নারী ফুটবলের জন্য হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক। প্রথমবারের মতো সিনিয়র ও অনূর্ধ্ব–২০ নারী দল এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে।
হামজা–শমিত–ফাহমেদুলে উন্মাদনা:
মার্চে প্রথমবার বাংলাদেশে এসে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী দেশের ফুটবলে নতুন রঙ যোগ করেন। প্রতিটি ম্যাচেই ছিল উপচেপড়া দর্শক, টিকিট ও জার্সির চাহিদা ছিল চোখে পড়ার মতো।
জুনে হামজার সঙ্গী হন কানাডা জাতীয় দলের ফুটবলার শমিত সোম। এরপর ইতালিয়ান প্রবাসী ফাহমেদুল ইসলামের অন্তর্ভুক্তিতে ফুটবল উন্মাদনা আরও বাড়ে। তবে মাঠের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। ফলে বছরজুড়ে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার পদত্যাগের দাবি উঠেছে সমর্থকদের কণ্ঠে।
স্পন্সর এলেও স্থবির তৃণমূল:
তারকা ফুটবলারদের আগমন ও নারী দলের সাফল্যে স্পন্সর আগ্রহ বাড়লেও তৃণমূল ফুটবলে গতি ফেরেনি। ক্লাবগুলো আবেদন করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন কিংবা নিয়মিত লিগ আয়োজন—কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি।
ভারত জয়, পুরস্কারের বৈষম্য:
১৮ নভেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামে ২২ বছর পর ভারতকে হারায় বাংলাদেশ পুরুষ দল। এই জয়ে তারা পান দুই কোটি টাকা পুরস্কার। অথচ ২০২৪ সালে টানা দ্বিতীয়বার সাফ জেতা নারী ফুটবলারদের দেড় কোটি টাকা পুরস্কারের ঘোষণা ২০২৫ সালেও বাস্তবায়ন হয়নি।
সব মিলিয়ে, ২০২৫ সাল বাংলাদেশের ফুটবলে ছিল সম্ভাবনার, উন্মাদনার—তবে একই সঙ্গে আক্ষেপ ও অপূর্ণতার বছর।