প্রতি সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ ব্যাংকে নোটের নকশা, মান এবং নিরাপত্তা বৈশিষ্টে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এটি শুধু আর্থিক ব্যবস্থাপনার অংশ নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রতিফলনও বটে।
আসুন বিভিন্ন সরকারের আমলে নোটগুলোতে কী কী পরিবর্তন ঘটেছে তা পর্যালোচনা করি।
১. ১৯৭১–১৯৭৫ (স্বাধীনতার পরবর্তী সময়)
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব নোট চালু করে। এই সময় নোটগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতির প্রতিফলন ছিল। প্রথম নোট ছিল ১, ৫, ১০, এবং ১০০ টাকার। নোটের ডিজাইনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং অন্যান্য প্রতীকী উপাদান অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২. ১৯৭৫–১৯৯০ (সামরিক শাসন এবং পরিবর্তন)
সামরিক শাসন আমলে নোটের ডিজাইনে অনেক পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৭৭ সালে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরিয়ে অন্যান্য প্রতীক ব্যবহার করা হয়। এই সময়ে ২ টাকার নোট চালু হয়।
৩. ১৯৯১–২০০১ (গণতান্ত্রিক শাসন ও আধুনিকীকরণ)
গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে নোটের নকশায় আধুনিকতার ছোঁয়া আসে। বিশেষত ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছবি আবার নোটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া ২০, ৫০ এবং ৫০০ টাকার নোট চালু করা হয়।
৪. ২০০১–২০০৮ (ডিজাইন এবং নিরাপত্তার উন্নয়ন)
এ সময় নোটে উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়। ২০০৪ সালে ১০০০ টাকার নোট চালু করা হয়। নোটে দেশের ঐতিহাসিক স্থান ও প্রতীকী উপাদানকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৫. ২০০৯–বর্তমান (ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং নোটের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন)
২০০৯ সালের পর থেকে নোটের নকশা ও নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, এবং বিভিন্ন স্থাপনার ছবি আধুনিক ডিজাইনে উপস্থাপিত হয়। নিরাপত্তা ফিচার হিসেবে হোলোগ্রাফিক স্ট্রিপ এবং ব্রেইল সিস্টেম চালু করা হয়। প্লাস্টিক নোটের প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক নোট শুধু মুদ্রা নয়; এটি দেশের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং ঐতিহাসিক বিবর্তনের একটি প্রতিফলন।
এসএ