স্ত্রী–সন্তানহারা ষাটোর্ধ্ব কৃষক আনু মিয়া। বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের মটকিরচর গ্রামে। তার জমি থেকে জোরপূর্বকভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছেন প্রভাবশালী ড্রেজার ব্যবসায়ীরা। এতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও মুরাদনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না বলে জানান।
স্থানীয়রা জানান, কৃষক আনু মিয়ার জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন প্রভাবশালী ড্রেজার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইউসুফনগর গ্রামের মোন্তাজ মিয়ার ছেলে।
কৃষক আনু মিয়া জানান, দুই বছর ধরে মটকিরচর মৌজায় আমার ৬৭ শতক কৃষি জমিতে ড্রেজার
মেশিন দিয়ে জোরপূর্বকভাবে কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইউসুফনগর গ্রামের ড্রেজার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। অনেক বার বাধা দেয়ার পরও সে কথা শুনছে না। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলে লোকজন এসে ড্রেজার ভেঙে দিয়ে যায়। কয়েকদিন পর আবারও মেশিন লাগিয়ে মাটি কাটা শুরু করে। আমার স্ত্রী ও ছেলে মারা গেছে, নিজেও অসুস্থ হয়ে আছি, কখন মরে যাবো যানিনা। সবার কাছে অনুরোধ আমার কেটে নেয়া জমির টাকা পেতে সহায়তা করুন। টাকাগুলোও যদি পাই তাহলে আমার কিছুটা সহায় হবে।
স্থানীয় কৃষক তারু মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ইউসুফনগর গ্রামের রফিক ও জাকির বিলের মধ্যে ড্রেজার লাগিয়ে আমাদের জমি থেকে মাটি কাটা শুরু করে। আমরা অনেক বাধা দিয়েছি কিন্তু কাজ হয়নি। অন্তবর্তী সরকারের সময়ও এখন আবারও জমি কাটা শুরু করছে। আমাদের পাড়ার মসজিদের জমিটাও কেটে নিয়েছে। আমরা তাদের বিচার চাই। আমাদের জমি ফেরত চাই।
মটকিরচর গ্রামের আয়নল মিয়া বলেন, রফিক আর জাকির মিলে আমাদের বিলের জমিগুলো বছরের পর বছর ধরে কেটে নিচ্ছে। অসহায় হয়ে শুধু দেখে যাচ্ছি। এদের বিচার কে করবে?
এ বিষয়ে ড্রেজার ব্যবসায়ী রফিক মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমির টাকা নিয়ে আনু মিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে, টাকার দেয়ার তারিখ একটা গেছে, সামনে আরেকটা তারিখ আছে। এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলব।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল হক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাছান খান বলেন, ড্রেজার নির্মূলে আমাদের ধারাবাহিক অভিযান চলমান রয়েছে। ইউসুফনগরের বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তহসিদার পাঠিয়ে ড্রেজার তুলে নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান বলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা আদালতে মামলা করতে পারে। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ছাত্রসমাজ, শিক্ষক প্রতিনিধি এবং গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এলাকায় কমিটি করে এটা কৃষি জমিগুলো রক্ষার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করব।