ফ্রান্সের সাগরপাড়ে চলছে ‘৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব’। বিশ্ব সিনেমার অন্যতম মর্যাদাকর এই আসরে যেমন যোগ দিয়েছেন হলিউড–বলিউড–সহ ১৬০টি দেশের শিল্পী–কুশলীরা, তেমনি ১২ দিনের এই আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরতে সাগরপাড়ে গিয়েছেন বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা। যেখানে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন শাহরিন জেবিন। দেশের প্রথমসারির জনপ্রিয় নিউজভিত্তিক টেলিভিশন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিনিধি হিসেবে কানে গিয়েছেন তিনি। জেবিনই প্রথম কোন টেলিভিশন নারী সাংবাদিক, যিনি বিশ্ব সিনেমার অন্যতম মর্যাদাকর আসর কান চলচ্চিত্র কাভার করার কৃতিত্ব গড়েছেন।
এ নিয়ে অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এটা নিশ্চয়ই আমার ক্যারিয়ারের জন্য বড় এক সাফল্য। আর এই সাফল্যের পেছনে বড় অবদান রেখেছে, চ্যানেল টোযেন্টিফোর। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা আমাকে যোগ্য মনে করেছেন বলেই, কানের মতো আসরে আমি যোগ দিতে পেরেছি। এ জন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
এরই মধ্যে জেবিনের ক্যামেরায় যেমন ধরা পরেছেন হলিউড তারকা টম ক্রুজ, তেমনি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বলিউড অভিনেতা অনুপম খেরের। এছাড়া সাগরপারের শহরটিতে যারাই যাচ্ছেন, তারা হচ্ছেন জেবিনের মুখোমুখি। যে খবরগুলো প্রতি মুহুর্তে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের বিভিন্ন সংবাদে সরাসরি জানানোর পাশাপাশি, তিনি অনলাইন প্লাটফর্মেও দেখাচ্ছেন।
জেবিন বলেন, এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বিভিন্ন দেশের তারকাদের মিলনমেলা ঘটে ১২ দিনের এই আয়োজনে। যে আয়োজন সফল করতে বছরব্যাপী প্রস্তুতি নেয় উৎসব কর্তৃপক্ষ।
এবারের কান আসরে আছে বাংলাদেশের উপস্থিতি। উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণপামের জন্য লড়ছে বাংলাদেশের ছবি আলী। স্বল্পদৈর্ঘ্য যে সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন আদনান আল রাজীব। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এবার যোগ দিয়েছেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও প্রযোজক, খাদিজা পারভীন বর্ষা। আসরের ওয়ার্ল্ড ওমেন কান এজেন্ডা ডিসকাশন বিভাগে অংশ নিয়েছেন তিনি। যেখানে ইসাবেল, মারিয়ানি ও নোরা আরমানীর মতো শিল্পী–লেখকদের সাথে বসেছেন তিনি। ১৪ এবং ১৫ মে হয়েছে এই বিভাগের আলোচনা পর্ব। এর পাশাপাশি মার্শে দ্যু ফিল্মে প্রদর্শিত হয়েছে ‘বাঙালি বিলাস’।
জেবিন আরও বলেন, একজন বাঙালি সংবাদকর্মী হিসেবে আমি গর্বিত হয়েছি এবার। কারণ ছবি আর আলোচক দিয়ে ৭৮তম আসরে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমি বিশ্বাস করি, আগামীতে কান–সহ আন্তর্জাতিক উৎসবগুলোতে আরও দাপটের সাথে থাকবে বাংলাদেশ।
দেশের প্রথমসারির জনপ্রিয় নিউজভিত্তিক টেলিভিশন, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে শাহরিন জেবিনের শুরুটা ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে। তার সঞ্চালনায় কালার্স টোয়েন্টিফোর মানেই, দর্শকদের কাছে আলাদা জনপ্রিয়তা। এরই মধ্যে সেলিব্রিটি টক–শো কেন্দ্রীক এই অনুষ্ঠানটি অতিক্রম করেছে, দুই’শ পর্ব। চলচ্চিত্র থেকে সংগীত, টিভি নাটক থেকে মঞ্চ, সব মাধ্যমের শিল্পীরাই এসেছেন তার অতিথি হয়ে।
জেবিন বলেন, তারকাদের কাছে সাধারণের অনেক কিছুই জানার আগ্রহ থাকে। হটসিটে বসে আমি সে কাজটাই করি। চেষ্টা করি, আলাদা কিছু দর্শকদের জন্য বের করে আনার।
বিনোদনের উপস্থাপক মানেই এক এক সময়ে এক এক চ্যানেলে নিজেকে উপস্থাপন। এক্ষেত্রে জেবিন কেন এক চ্যানেলেই বেঁধে রেখেছেন নিজেকে? প্রশ্ন করতেই এই উপস্থাপক বলেন, এখন অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করছে, যারা করছে তাদের সবার প্রতি আমার সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা। তবে আমি নিজেকে এভাবে দর্শকদের সামনে আনতে চাই না। কারণ, এতে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি হয়। আমি চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময়ে বিনোদনের সব খবর নিয়ে হাজির হই। আমি দেখেছি, দর্শকরা সারাদিন অপেক্ষা করে, আমার এই আয়োজনের জন্য। কারণ, বুলেটিন শুরু হতেই ইনবক্স আর কমেন্ট আসা শুরু হয়।
গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় হলেও, বাবা নেয়ামত আলি ও মা সাবিনা ইয়াসমিন নিলুর একমাত্র সন্তান শাহরিন মাহফুজা জেবিনের বেড়ে ওঠা ঢাকায়। পড়াশোনা ঢাকা সিটি কলেজে। শিক্ষা জীবনেই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা শুরু করেন ৫ ফিট ৬ ইঞ্চি উঁচ্চতার এই তরুণী। শুরুটা এটিএন বাংলায় প্রচারিত বাণিজ্যমেলা প্রতিদিন দিয়ে। এরপর এনটিভিতে প্রেজেন্টার হান্টের সুবাদে চ্যানেলটিতে প্রচারিত শুভ সন্ধ্যা, সাপ্তাহিক রান্নার অনুষ্ঠান, গানের লাইভ–সহ একাধিক আয়োজনে দেখা যায় তাকে। পরবর্তীতে যমুনা টেলিভিশনে স্পোর্টস বিভাগের সাথে যুক্ত হন। সেখান থেকে একাত্তর টিভি হয়ে ২০১৯ সালে যোগ দেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে।
জেবিন জানান, এক দশকের সাংবাদিকতা জীবনে অনেক কিছুই শিখেছি। আরও শিখতে চাই। দর্শকদের একজন আস্থার মানুষ হয়ে উঠতে চাই।
বর্তমানে টেলিভিশনের বিনোদন বিভাগের সাংবাদিকতা ও উপস্থাপনার পাশাপাশি দেশ বিদেশের বিভিন্ন কর্পোরেট শো হোস্ট করছেন জেবিন। সম্প্রতি দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সভা উপস্থাপনা করেছেন তিনি। এছাড়া নিয়মিত করছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত ইভেন্টে।