প্রযুক্তির এই যুগে ব্যক্তিগত বা কর্মজীবনে কম্পিউটার আমাদের নিত্যসঙ্গী। অফিস বা বাসায় দীর্ঘ সময় মনিটরের সামনে কাজ করতে গিয়ে চোখে ও দৃষ্টিতে নানা সমস্যা দেখা দেয়, যা সম্মিলিতভাবে কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রম (Computer Vision Syndrome) নামে পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টি–ক্ষমতার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়।
কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোমের সাধারণ উপসর্গ:
- চোখে চাপ অনুভব করা ও ক্লান্তি
- মাথাব্যথা
- ঝাপসা দেখা
- চোখ শুষ্ক লাগা ও জ্বালা করা
- ঘাড় ও পিঠে ব্যথা
- উজ্জ্বল আলোতে তাকাতে সমস্যা
- মনিটরে প্রতিচ্ছবি বা গ্লেয়ার দেখা
এই উপসর্গগুলো উপেক্ষা করলে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত বিরতি এবং সঠিক বসার অভ্যাসের পাশাপাশি মনিটরের সঠিক ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
চোখকে আরাম দিতে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম:
১. ২০–২০–২০ নিয়ম মানুন:
প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ সেকেন্ড ধরে ২০ ফুট দূরে তাকান। যদি না পারেন, চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। এটি চোখের ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে।
২. মনিটরের অক্ষর বড় করুন:
স্বাভাবিক বইয়ের অক্ষরের তুলনায় ২–৩ গুণ বড় ফন্টে পড়লে চোখে চাপ কম পড়ে। হালকা রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডে গাঢ় অক্ষরও পড়ার সুবিধা বৃদ্ধি করে।
৩. মনিটরের সঠিক অবস্থান:
- চোখ থেকে দূরত্ব: ৫০ সেমি (২০ ইঞ্চি)
- পর্দার মধ্যভাগ চোখের লেভেল থেকে ৬–৮ ইঞ্চি নিচে
- মনিটর সামান্য ১৫ ডিগ্রি কোণে পিছনে হেলানো
- উজ্জ্বলতা মাঝারি, কনট্রাস্ট বেশি
- কক্ষের আলো এমন হবে যেন মনিটরের আলো একমাত্র উৎস না হয়
৪. বসার নিয়ম:
ভালো চেয়ারে বসুন। কোমর, হাঁটু ও কনুই ৯০° কোণে থাকবে। কিবোর্ড ও মাউস কনুইয়ের নিচে রাখুন এবং কবজি সোজা রাখতে প্রয়োজনে হাতল ব্যবহার করুন। ডকুমেন্ট হোল্ডার মনিটরের সমউচ্চতায় রাখুন।
৫. আলো ও কক্ষের পরিবেশ:
জানালার অতিরিক্ত আলো এড়াতে পর্দা ব্যবহার করুন। রুম খুব ঠান্ডা না রাখাই ভালো; অতিরিক্ত এসি ব্যবহার করলে চোখ শুকিয়ে যায়।
৬. খাদ্যাভ্যাস:
কাজের ফাঁকে হালকা খাবার খান। যথেষ্ট পানি পান করুন। দীর্ঘ সময় বসে কাজ করার সময় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
এই নিয়মগুলো মানলে চোখের ওপর চাপ কমবে এবং দীর্ঘ সময় মনোযোগ দিয়ে কাজ করা সম্ভব হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, প্রতি ৬–১২ মাসে চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।