মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৫
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৫

কখনও কোনো আসনে হারেননি খালেদা জিয়া

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তিনি ফেনী, বগুড়া, ঢাকা, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, খুলনা—যেখানেই নির্বাচন করেছেন, সেখানেই তিনি বিজয়ী হয়েছেন। দেশের নির্বাচনের ইতিহাসে খালেদা জিয়াই একমাত্র উদাহরণ, যিনি ৫টি সংসদ নির্বাচনে ২৩টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটিতে বিজয়ী হয়েছেন।

ভোটে হারের গল্প খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ইতিহাসে নেই। যদি নির্বাচন জনপ্রিয়তার মান নির্ধারণ করে, তাহলে তিনি সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন। এমনকি যেসব নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারেনি, সেসব নির্বাচনেও তিনি যতটি আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন, তার সব কটিতে জয়ী হন। বাংলাদেশে বা উপমহাদেশে তার সমমর্যাদার অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতা এ ধরনের কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি।

১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া বগুড়া–৭, ঢাকা–৫, ঢাকা–৯, ফেনী–১ ও চট্টগ্রাম–৮—এই পাঁচ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পাঁচটি আসনেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। একই সঙ্গে বিশ্বের ইতিহাসে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কোনো দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় কোনো নারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হন।

১৯৯৬ সালের জুনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তবে সেই নির্বাচনেও খালেদা জিয়াকে হারাতে পারেননি কেউ। পাঁচটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতে বিজয়ী হন তিনি। আসনগুলো হলোবগুড়া–৬, বগুড়া–৭, ফেনী–১, লক্ষ্মীপুর–২ ও চট্টগ্রাম–১।

পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনেও খালেদা জিয়া বগুড়া–৬, বগুড়া–৭, খুলনা–২, ফেনী–১ ও লক্ষ্মীপুর–২—এই পাঁচ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটি আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।

এর আগে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকারে গিয়েছিল বিএনপি। সেই নির্বাচনে ফেনী–১ ও ২, বগুড়া–৭, সিরাজগঞ্জ–২ ও রাজশাহী–২ আসন থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন খালেদা জিয়া। তখন তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু একতরফা সেই নির্বাচন বিতর্কের জন্ম দেয়। ওই সংসদেই অবশ্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়। শপথ নেওয়ার মাত্র ১১ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন খালেদা জিয়া। এরপর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়।

২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন একজনের জন্য সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নির্ধারণ করায় খালেদা জিয়া বগুড়া–৬, বগুড়া–৭ ও ফেনী–১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনটি আসনেই বিজয়ী হন তিনি।

টানা আট বছর রাজপথে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। যখন তিনি এই আন্দোলনের পথে হাঁটতে শুরু করেন তখন শুরুতে কেউ পাশে না থাকলেও একসময় তিনি পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। কখনও আপস করেননি বলে তাকে আপসহীন নেত্রী উপাধি দেওয়া হয় তখন। দৃঢ় মনোবলের কারণে, দেশপ্রেমের কারণে, গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে দেশের আপাময় জনগণ তাকে কখনও ছেড়ে যায়নি।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ছয়টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় গত ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল খালেদা জিয়াকে। এর আগে ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রওনা দিয়ে গাড়িতে ওঠেই অস্বস্তি বোধ করছিলেন তিনি। বহু বছর ধরেই খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস এবং চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

আরও পড়ুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More