কেমন হতো, যদি সাদা–কালো জার্সির বদলে জুভেন্টাসকে দেখা যেতো গোলাপি রঙের জার্সি পরে মাঠে নামতে? কিংবা দুই মিলানের জার্সি যদি একই হতো? রোমার জার্সির লাল–হলুদ রঙটা আসলে কী বুঝায়? বিশ্বের বিখ্যাত ক্লাবগুলোর জার্সির পেছনের গল্প নিয়ে তিন পর্বের প্রথমটিতে থাকছে ইতালিয়ান সিরিয়া ক্লাব জুভেন্টাস, রোমা, এসি মিলান এবং ইন্টার মিলানের জার্সির পেছনের গল্পগুলো।
তুরিনের ওল্ড ল্যাডি বা বুড়ি হিসেবে খ্যাত জুভেন্টাস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৭ সালে। ইতালির অন্যতম পুরোনো এই ক্লাবের শুরুর দিকে জার্সির রঙ ছিলো গোলাপি। কারণটি একেবারেই ভিন্ন তখনকার জুভেন্টাসের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই ছিলেন ম্যাসিমো ডিআজেগলিও ক্লাসিকাল হাই স্কুলের ছাত্র। স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের উৎসাহে ছাত্ররা মিলে তৈরি করেন জুভেন্টাস ক্লাবটি। ফলে আর্থিক স্বাচ্ছলতা না থাকায় জার্সি কেনাটাও ছিলো ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য।
চার বছর পর ক্লাব কর্তৃপক্ষ খেয়াল করলো ইংলিশ ক্লাবগুলো স্টাইল, উজ্জ্বল রং আর ডিজাইনেও এনেছে পেশাদারিত্বের ছাপ। ফলে দলের সাবেক অধিনায়ক টম স্যাভেজের দায়িত্বে সাদা–কালো স্ট্রাইপ দেওয়া জার্সি পেলো তারা। তাতে অবশ্য খুব একটা খুশি হয়নি জুভারা। কিন্তু কে জানতো ওই সাদা–কালো স্ট্রাইপ জার্সিই হয়ে যাবে তুরিনের বুড়িদের ইতিহাসের অংশ।
তুরিন থেকে এবার ৬৭১ কিলোমিটার দক্ষিণ–পূর্ব দিকে রোম শহরে যাওয়া যাক। জুভেন্টাসের মতো অতো সফল না হলেও ইতিহাস আর ঐতিহ্যে রোমা থাকবে ইতালির শীর্ষ ক্লাবগুলোর তালিকাতে। রোম শহরের ঐতিহ্য সাদা রঙকে ভিত্তি করে ১৯২৭ সালে ক্লাব প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে কিটের রঙ ছিলো পুরো সাদা। মাত্র দু‘বছর পরেই জার্সির রং বদলে হয়ে যায় গাঢ় মেরুণ লাল ও উজ্জ্বল সোনালী হলুদ রং। ফলে রোমার ডাকনাম হয়ে যায় জাল্লোরসি। সেই সাথে রোমান সাম্রাজ্যের আভিজাত্য আর মর্যাদাও ফুটে ওঠে।
ইতালির রাজধানী রোম ছেড়ে এবার যাওয়া যাক ৫৭৯ কিলোমিটার মিটার দূরে অবস্থিত মিলান শহরে। এখানে ক্লাব দুটো এসি মিলান আর ইন্টার মিলান। গত একশ বছর ধরে এসি আর ইন্টার মিলানকে আলাদা দেখা গেলেও এই দু–দলের শুরুটা হয়েছিলো এক সাথেই। ১৮৯৯ সালে মিলান ফুটবল অ্যান্ড ক্রিকেট ক্লাব নামে থাকলেও ধীরে ধীরে শুধু ফুটবলেই মনোযোগ দেয় তারা।
কিছুদিন পরে ক্লাবের দুই অংশের মধ্যে ব্যাপক মতানৈক্য দেখা দেয়। যার কারণে ১৯০৮ সালে গঠিত হয় ফুটবল ক্লাব ইন্টারন্যাসিওনাল মিলানো; যা বর্তমানে ইন্টার মিলান নামে পরিচিত। ক্লাবের আগের অংশটা নাম পাল্টে পরিণত হয় এসি মিলানে। শুরুর দিকে মিলান ফুটবল অ্যান্ড ক্রিকেট ক্লাবের লাল–কালো জার্সির রঙটা, এসি মিলান রেখে দেয়। তাই তাদের ডাকা হয়, রসোনেরি নামে। জার্সির লাল রঙটা বুঝায় দলের স্পিরিট আর আক্রমণাত্মক মানসিকতাকে আর কালো রঙটা প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরায়।
অপরদিকে ইন্টার মিলান তাদের জার্সির রংও পাল্টে ফেলে। মিলানের লাল–কালো থেকে নিজেদের আলাদা করার জন্য তারা নীল–কালো জার্সি পরতে শুরু করে। এখান থেকেই উৎপত্তি হয় তাদের ডাকনাম, নেরাজ্জুরি। জার্সির নীল–কালো রংটা মূলত দিন আর রাতের আকাশের রং থেকে নেওয়া।
মোহাম্মদ হাসিব / এজে / দীপ্ত সংবাদ