ওমানে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আট প্রবাসীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সারিকাইতসহ পুরো সন্দ্বীপজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বুধবার (০৮ অক্টোবর) বিকেলে স্থানীয় সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সবাই সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কাজ শেষে ফেরার পথে তাদের গাড়িতে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগতির গাড়ি ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই আটজন প্রাণ হারান।
নিহত আটজনের মধ্যে সাতজনের বাড়িই সন্দ্বীপে। তাদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি সারিকাইত ইউনিয়নে। নিহত সন্দ্বীপের সাত প্রবাসীর অপর দুজনের মধ্যে একজনের বাড়ি মাইটভাঙ্গায়, অপরজনের সন্দ্বীপ পৌরসভার রহমতপুরে।
এ ছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত অন্য প্রবাসী আলাউদ্দিন রাউজান উপজেলার চিকদার ইউনিয়নের ইউসুফের ছেলে বলে জানা গেছে। এ দুর্ঘটনায় একমাত্র বেঁচে যাওয়া গাড়িচালক ওমান দুখুম হাসপাতালে চিকিৎসারত রয়েছেন। গাড়িচালক ছগির ভিডিওকলে আটজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিদরা থেকে সাগরমুখী একটি মাছ পরিবহনের বড় গাড়ি বেপরোয়া গতিতে ধাক্কা দিলে তাদের গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
জানা যায়, সারিকাইত ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দুর্ঘটনায় নিহত প্রবাসী শাহাবুদ্দীন, বাবলু ও রকি। তিনজনের বাড়ি পাশাপাশি। একই সমাজে বসবাস ছিল তাদের। তাদের হারানোর বেদনায় স্বজনদের কান্নার রোল এলাকার আকাশ ভারী করে তুলেছে। দেড় বছর আগে বিয়ে করা শাহাবুদ্দীনের ৪ মাসের ফুটফুটে বাচ্চা আছিয়া বাবা ডাকার আগেই এতিম হয়ে গেল। আছিয়াকে কোলে নিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন তার দাদা ছিদ্দিক।
তিনি বলেন, ‘মাত্র ২১ দিন আগে ছুটি শেষ করে ওমানে যায় আমার ছেলে শাহাবুদ্দীন। ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি সংসারের সুখের জন্য, আর আজ সে চলে গিয়ে সংসার শূন্য করে দিল।শাহাবুদ্দীনের পাশেই বাবলুর ঘর। তার দুই সন্তানের বয়স চার বছরের নিচে। বুঝজ্ঞান হওয়ার আগেই বাবাকে হারিয়ে ফেলল তারা। সন্দ্বীপ পৌরসভার রহমতপুরের রনির পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তিন বছর আগে একসঙ্গে পুকুরে ডুবে মারা যায় তার দুই ভাইয়ের দুই সন্তান, গত বছর লিভার ক্যান্সারে হারিয়েছেন আরেক ভাইয়ের এক সন্তানকে। আজ দেড় বছরের একমাত্র সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে চলে গেলেন রনিও।‘
মাইটভাঙ্গা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিহত প্রবাসী জুয়েল ওমানে আছেন ছয় বছর ধরে। ৬–৭ মাস আগে ছুটিতে বাড়ি এসে পাকা ঘর নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছিলেন; কিন্তু শেষ করে যেতে পারেননি।
সারিকাইত ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম জানান, প্রবাসে একসঙ্গে এত জনের অকালমৃত্যুর ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মংচিংনু মারমা জানান, নিহতদের দাফন–কাফনের বিষয়ে সরকারিভাবে যা যা সহযোগিতা দরকার তা করা হবে।
রুনা