বুধবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৫
বুধবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চাই না ফারাজ সিনেমা আসুক: অবিন্তার মা

ইটস অ্যা রং, রং স্টেইটমেন্ট। এটা হতে পারে না। এই মুভিটা রং, এটা কোনদিনই হতে পারে না।

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: সর্বশেষ সম্পাদনা:

লি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা নিয়ে তৈরি সিনেমা ‘ফারাজ’ আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেতে যাচ্ছে বলিউডে। তবে ফারাজ সিনেমাটি মুক্তি পাক তা চান না ওই ঘটনায় নিহত অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ। ইতোমধ্যে সিনেমাটির ট্রেলার প্রকাশিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শাহজাদপুরে অবিন্তা কবির ফাউন্ডশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আপত্তি জানান তিনি। অবিন্তা কবিরের পরিবারের সদস্যরা এ আয়োজন করেন।

রুবা আহমেদ বলেছেন, ‘ফারাজ সিনেমাটি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। সিনেমাটির নির্মাতা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এ ঘটনায় কোনো সহমর্মিতাও প্রকাশ করেনি। আইনি নোটিশ পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমার দেশে যখন এটা আসবে প্লিজ ওটিটিতে এটা প্রকাশ হতে দিয়েন না। দেশের মানুষের দরকার নেই এটা দেখার।’

ফারাজ সিনেমা

আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে বলিউড সিনেমা ‘ফারাজ’। গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমার ট্রেলার সম্প্রতি প্রকাশিত হয়।

রুবা আহমেদ বলেন, ‘এটা দেখা কোনো মায়ের পক্ষে সম্ভব না। আমি মা, আমার মেয়েকে আমি হারিয়েছি। মেয়ের জীবন কীভাবে চলে গেছে সেটা বড় পর্দায় দেখাচ্ছে, অন্যরা উপভোগ করছে এবং অন্য মানুষ সেখান থেকে ব্যবসা করে পয়সা নিচ্ছে, এগুলো মা হিসেবে আমি কিভাবে চাইব। এতে শুধু আমার মেয়ের নয়, দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। আমি চাই না, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এই সিনেমা না আসুক।’

তিনি বলেন, ‘আমি ছয় মাস মুভিটাকে আটকে রেখেছি, এটা না হলে ছয় মাস আগেই মুভিটা মুক্তি পেয়ে যেত। আমি প্রথম ২০১৯ সালে এই মুভিটির সম্পর্কে জানতে পারি। এই মুভির প্রথম পোস্টার ২০২১ সালের ৫ আগস্ট প্রথম আমার হাতে এসেছে। এই মুভি বন্ধের জন্য আমি নির্মাতাদের কাছে উকিল নোটিশ পর্যন্ত পাঠিয়েছি।’

রুবা আহমেদ বলেন, ‘আমার মেয়ে সাধারণ জনতা। আমার মেয়ে কোনো পণ্য না। ও কোনো কিচ্ছু না। ও অবিন্তা কবির, আমার মেয়ে। আপনারা কেউ ওকে জানতেন না। আপনারা কী আসলেই অবিন্তা কবিরকে চিনতেন? যদি ও ২০১৬ তে মারা না যেত? চিনতেন না। আপনার ওর (অবিন্তা) নামটা জেনেছেন কারণ, শি পাসড ওয়ে দ্যাট নাইট।’

বলিউড সিনেমা ফারাজ নির্মিত হয়েছে ‘হলি আর্টিজান : একটি জার্নালিস্টিক অনুসন্ধান’ বইয়ের সূত্র ধরে। বইটি লিখেছেন দৈনিক বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি নুরুজ্জামান লাবু।

অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ফারাজ সিনেমাটি নিয়ে অবিন্তা কবিরের পরিবারের আপত্তি আছে। সিনেমাটিতে অবিন্তা কবির ও তার পরিবারের সদস্যদের চরিত্র উপস্থাপন করা হবে। এ নিয়ে অবিন্তার পরিবারের সদস্যরা বিব্রত।’ তিনি আরও বলেন, ‘হলি আর্টিজানের হামলার ঘটনার পর অবিন্তা কবিরের পরিবারের সদস্যরা আড়ালে থাকতেন। এই প্রথম তারা গণমাধ্যমের সামনে আসবেন।’

যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি ইউনিভার্সিটির অক্সফোর্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন বাঙালি তরুণী অবিন্তা কবির। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকায় ফেরার তিন দিন পর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন তিনি। তার স্মৃতি ধরে রাখতে ২০১৭ সালের ৪ মার্চ প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘অবিন্তা কবির ফাউন্ডেশন’।

অবিন্তার মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘অবিন্তা, তারিশ এবং ফারাজ হোসাইন আরও বাকি অন্যদের সঙ্গে এই দুনিয়া থেকে চলে গেছে। আমি মনে করি এটাই যথেষ্ট, এটা নিয়ে সিনেমা বানানোর কোনো মানে দেখি না। আর মুভিটার নামটা ফারাজ হয়েছে তার কারণটা হলো এখানে ডেফিনিটলি একটা ক্যারেক্টারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সেই ক্যারেক্টারে জোর দিতে গিয়ে, আমার মেয়ের কথা চলে আসছে।’

অবিন্তার মা রুবা আহমেদ আরও বলেন, ‘আমরা কেউ জানি না সেদিন ওরা কিসের মধ্যে দিয়ে গেছে। কেউ আমরা জানি না, কোনোদিন জানতেও পারব না। সো আমরা একটা গল্প বানালাম। সেই গল্প বানিয়ে মুভিটা তৈরি করলাম। কিন্তু এই মুভির সঙ্গে যে পরিবারগুলো আছে, সেই পরিবারগুলোর কাছে থেকে তো কনসেন্ট নিতে হবে। সেই কনসেন্ট তো নেওয়া হলো না।’

রুবা আহমেদ আরও বলেন, ‘এই মুভিতে আমার মেয়ের জন্য আরেকজন জীবন দিয়ে দিয়েছে, সে হিরো। নো, দ্যাটস রং। আমি এটা বিশ্বাস করি না। কারণ এটার কোনো প্রমাণ নাই। ওখান থেকে কেউ ফিরে আসেনি। যারা বেঁচে এসেছে তারা কেউ কিচ্ছু জানে না, বলতে পারে না। এখানে কোনো ইভিডেন্স নাই যে কেউ হিরো হয়েছে। যদি হিরো হয়ে থাকে তাহলে ২২টা মানুষ যে চলে গেছে (মারা যাওয়া) তারা হিরো। আমরা কেউ না।’

তিনি বলেন, ‘সো কাউকে এককভাবে হিরো বানানোটা আপনারা যদি আমাকে বলেন, আমি সেটা বিশ্বাস করি না। ইটস অ্যা রং, রং স্টেইটমেন্ট। এটা হতে পারে না। এই মুভিটা রং, এটা কোনোদিনই হতে পারে না।’

আরও পড়ুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More