ঝিনাইদহ-৪ আসনে টানা তিনবার নির্বাচিত হন আনোয়ারুল আজীম আনার। এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তার তার। রাজনীতিতে রয়েছে বর্ণাঢ্য পরিচয়।
ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধারের খবরে তার নির্বাচনী এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং শুভাকাঙ্খীরা বুধবার (২২ মে) ভিড় করেন সংসদ সদস্যের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সরকারি ভূষণ স্কুলের পাশে অবস্থিত বাড়ির সামনে। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা আনার হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
আনোয়ারুল আজিমের গ্রামের বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার পার-শ্রীরামপুর গ্রামে। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন বিএনপি নেতা ও পরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৯২ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হলে আনোয়ারুল আজিম কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে আবদুল মান্নান বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তখন আনোয়ারুল আজিমও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তারা দুজনই এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে আনোয়ারুল আজিম ভারতে চলে যান। সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থানকালে তিনি ২০০৪ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
২০০৯ সালের নির্বাচনে আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য এবং আনোয়ারুল আজিম কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তার সঙ্গে আবদুল মান্নানের বিরোধ হয়। ২০১৪ সালে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আনোয়ারুল আজিম। টানা তিনবার তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর শোক
এমপি আনারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
যা বলছেন মেয়ে ডেরিন
এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেছেন, ‘আমার বাবাকে হত্যা করে আমাকে এতিম করে দিল, আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের দেখতে চাই, তাদের ফাঁসি চাই।’
বুধবার (২২ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।
ডরিন বলেন, আমার ভাই নেই। আমি নিজেই এখানে এসেছি। ডিবি পুলিশ বিষয়টি দেখছে বলে অনেক তথ্য পাচ্ছি। আমরা কাউকে সন্দেহ করছি না। তবে আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের আমি দেখতে চাই। আমি জেনেছি আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা শুনেই আমি ডিবি প্রধানের কাছে এসেছি। তারা এরই মধ্যে তিনজনকে ধরেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মামলা করব। ডিএমপি কমিশনার, ডিবি প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সবাই আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।’ এ সময় বাবা হত্যার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এমপি আনারের মেয়ে।
নেতাকর্মীরাদের বক্তব্য
দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এলাকার উন্নয়নে যথেষ্ট আন্তরিক ছিলেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এলাকায় ছুটে বেড়াতেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে তেমন ভাবেননি। কোনো মানুষের মৃত্যুর খবর শুনলে জানাজায় হাজির হতেন। এভাবেই সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী বলেন, ‘ এমপি সাহেবের মৃত্যুসংবাদ শুনে রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে এসেছি। কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা বলতে পারছি না। জানা মতে তার সঙ্গে কারো বিরোধ ছিল না।’