ভারতে গিয়ে নিখোঁজ ঝিনাইদহ–৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে স্তব্দ পুরো কালীগঞ্জবাসী। তার মরদেহ উদ্ধার না হওয়াতে মৃত্যু নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। প্রতিদিনের মত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) এমপির শহরের বাসভবন ও পাশেই দলীয় কার্যালয়ের সামনে সহস্রাধিক নারী–পুরুষের ভিড় লেগে থাকে।
এদিকে তার মৃত্যুর খবরে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বেলা ১২ টার পর ভষণ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা, দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় পতাকা উত্তোলনকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ। তারা অঝোরে কেঁদেই চলেছেন। পতাকা উত্তোলন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়ুব হোসেন, মতিয়ার রহমান মতি, ওহিদুজ্জামান ওদু ও মোস্তাফিজুর রহমান বিজুসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা কালো ব্যাচ ধারণসহ শুক্রবার জুমা শেষে দোয়া মাহফিল করবেন বলেও ঘোষনা দেন।
নেতারা বলেন, আনারকে যারা হত্যা করেছে; তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। আমরা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানায় দ্রুত আমাদের এমপি’র মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করবেন। এমপি আনার আওলীগের মনোনীত টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
দলীয়ভাবে আগামী শনিবার সকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সভা আহ্বান করে আরও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন বলেও জানান নেতারা।
এদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমপি আনারের মরদেহ উদ্ধার না হওয়ায় খবর জেনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এমপির শহরের বাসভবন ও দলীয় কার্যালয়ের সামনে নারী পুরুষ সাধারণ জনতার ভিড় জমতে থাকে। মৃত্যু নিয়ে তাদের ধোয়াশা কাটছে না। তিনি কি সত্যিই মারা গেছেন, না বেঁচে আছেন এমন কথাও বলছেন অনেকেই। যে কারণেই তার মৃত্যু বিষয়টি নিয়ে ঘোলাটে পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আজিফ জানান, এমপি আনারের নিখোঁজ এসব ঘটনা নিয়ে তার সেজো ভাই এনামুল হক ইমান গত ১৯ মে কালীগঞ্জ থানাতে একটি ডিডি করেছেন। বিষয়টি আমাদের উপর মহলে অবহিত করেছি। এমপি আনারের বিষয়টি তাদের সরকারের বিভিন্ন সংস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন।
উল্লেখ্য, ১২ মে দর্শনার গেদে বর্ডার দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মন্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে ওঠেন। পরের দিন ১৩ মে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। ১৫ মে বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাসের হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ করে জানান তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। ১৬ মে এমপির ব্যক্তিগত গাড়ি চালক তরিকুল ইসলামের ব্যক্তিগত মুঠোফোনেও একটি ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানান দিল্লি যাওয়ার কথা।
এরপর থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান আনোয়ারুল আজীম আনার। এরপর থকে পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তাকে ফোনে বা কোনো মাধ্যমে না পেয়ে বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে জানান উদ্বিগ্ন এমপি পরিবার। এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ১৮ মে থানায় একটি মিসিং ডাইরি করেন এমপি’র পরিচিত ভারতের বরাহনগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস। ১৯ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানাতেও তার সেজা ভাই একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন।
আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ–৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়াামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৯৩ সালে পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমপি হবার পর দির্ঘ গেল ১০ বছরে তিনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করছেন। সাংসদ হিসাবে বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার বেশ সুনাম রয়েছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের সাথে দেখা করে সমস্যা শোনেন ও সমাধান করেন। তিনি চলাচলের সময় কোন পুলিশ প্রটোকল ব্যবহার না করে একা একা চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সব থেকে আলোচিত বিষয় তার নির্বাচনী এলাকায় যে কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার বাড়িতে যান এবং শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। এমনও হয়েছে তিনি একদিনে ১০ জন মৃত্যু ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে দেখা করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি পাঁচ সহস্রাধিক মৃত ব্যক্তির জানাজায় অংশগ্রহণ করেছেন। যা দেশের একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে বিরল।