সিলেটে নিজের মৃত্যুর নাটক সাজিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করা নাহিদ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দীর্ঘ ৪০ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান পরিচালনার পর তাঁকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ।
রবিবার (২ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
পুলিশ সুপার জানান, শুক্রবার (৩১ মার্চ) ভোর রাতে খবর পান, সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার মাথিউরা পূর্বপার গ্রামের মো. আব্দুল হেকিমের (৬৮) বাড়ির কেয়ারটেকার নাহিদ ইসলাম (২৮) খুন হয়েছেন।
এমন খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার থানার একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে বিছানা, ঘরের মেঝে এবং বারান্দা রক্তের চিহ্ন থাকলেও লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকাণ্ড মনে হওয়ায় এর রহস্য উদঘাটন এবং ‘হত্যাকাণ্ডে’ জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য বিয়ানীবাজার থানার একটি গোয়েন্দা দল অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে।
অবশেষে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (১ এপ্রিল) খুন হওয়ার নাটক সাজানো নাহিদকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের একটি চৌকস দল।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত নাহিদ জানায়, প্রায় ১৪ বছর ধরে বিয়ানীবাজারের ওই এলাকায় থাকলেও তাঁর প্রকৃত পরিচয় কেউ জানে না। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, নাহিদের বাড়ি নিলফামারীতে, সেখানে অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় তিনি আত্মগোপনে আছেন।
তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় পুলিশ জানতে পারে, নাহিদ মূলত অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত ছিলেন এবং এর মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা তার ঋণ হয়ে যায়। এরপর তিনি কৌশলে জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম পরিবর্তন করে স্থায়ী ঠিকানা গোপন রেখে বিয়ানীবাজারের ওই বাড়িতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে থাকতে শুরু করেন এবং সেটিকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন।
প্রকৃতপক্ষে তার নাম তাজুল ইসলাম, পিতার নাম হোসেন আলী, মাতার নাম আম্বিয়া বেগম, ঠিকানা বড়ভিটা পূর্বপাড়া, থানা কিশোরগঞ্জ, জেলা নিলফামারী।
অনুসন্ধানের একপর্যায়ে নাহিদের প্রতি সন্দেহ হলে ঘর তল্লাশি করে তার নিজের হাতের লেখা একটি ডায়েরি পাওয়া যায়, যাতে অনেক দেনা–পাওনার হিসাব লেখা। ঘটনাস্থলের আশপাশে ভালো করে তল্লাশি করে একটি বালতি ও মগে রং গুলিয়ে রাখার আলামত পাওয়া যায়।
পুলিশ জানায় গ্রেপ্তারকৃত নাহিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
আফ/দীপ্ত সংবাদ