আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে ৩৬ দফা প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।
দলটির পক্ষ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত কোনো কর্মকর্তাকে নির্বাচনী কাজে ব্যবহার না করা এবং দলীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের পোলিং পার্সোনেল বা নির্বাচনী এজেন্ট না করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বেলা ১১টায় ড. আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক করে। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাবেক ইসি সচিব ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি জানান, তাদের (বিএনপির) মূল পরামর্শ হলো— বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা।
মঈন খান বলেন, “বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের অবৈধ নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সকল বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদেরকে কোনো ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।“
এছাড়াও, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত যেমন— ইসলামী ব্যাংক, আল–আরাফাহ ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, ইবনে সিনা ইত্যাদির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নিয়োগ না দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ড. মঈন খান জানান, এবারের নির্বাচন যাতে দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হয়, সেই ব্যবস্থা নিতে ইসিকে কঠোর হবার পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। তারা আশা করেন, নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও আইনের প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগে নির্ভীক হয়ে দায়িত্ব পালন করবে।
বিএনপির পক্ষ থেকে ইসিকে দেয়া ৩৬ দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে–
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আদলে নিরপেক্ষতা: বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে।
মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তন: নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে ডিসি, ইউএনও, এসপি, ওসি–সহ মাঠ প্রশাসনকে সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ইসির হাতে: নির্বাচনকালে বেসামরিক প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল কর্মকর্তার বদলি, পদায়ন ও কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের ভার নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারে নিতে হবে।
কঠোর নিরাপত্তা: সকল ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের কমপক্ষে এক সপ্তাহ পূর্ব হতে সামরিক বাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
সিসি ক্যামেরা ও অভিযোগ কেন্দ্র: ভোটাধিকার প্রয়োগ অবাধ করতে গোপন কক্ষের কার্যক্রম ব্যতীত অন্যান্য দৃশ্য পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টিতে সিসি ক্যামেরা সংস্থাপনের ব্যবস্থা এবং ১২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য অভিযোগ নিরসন কেন্দ্র (Complain Redress Centre) চালু করতে হবে।
মামলা প্রত্যাহার: জুলাই ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীদের নামে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে দায়েরকৃত মিথ্যা, বানোয়াট ও গায়েবি মামলাসমূহ নির্বাচনের সময়সূচি জারির পূর্বেই প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার: নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বেই দলীয় বিবেচনায় প্রদত্ত সকল অস্ত্র সরকারের কাছে জমা দেওয়া এবং সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল: সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানে এবং দূতাবাসগুলোতে চুক্তিভিত্তিক সকল নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
ট্রিপল ‘সি’ প্রতিরোধ: অর্থ, দুর্নীতি ও সহিংসতা অর্থাৎ ট্রিপল ‘সি’ (Cash, Corruption, Criminality) এর অসৎ প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে।
ফল ঘোষণা: ভোট গণনা শেষ হবার পরপরই নির্বাচনের ফলাফল প্রতিটি কেন্দ্র হতে সরাসরি ঘোষণা করতে হবে।