বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানো হবে কি না—সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এক পর্যবেক্ষণে এ কথা জানান।
এর আগে বুধবার (২৮ মে) আপিল বিভাগ গেজেট প্রকাশ সংক্রান্ত বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য শুনতে বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করে। পাশাপাশি ইশরাককে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা লিভ টু আপিলের শুনানির সময়ও নির্ধারণ করে।
আদালতে ইশরাকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান ও অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ। অপরদিকে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বিজয়ী হন। ফলাফল ঘোষণার পর বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন নির্বাচনে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ এনে ৩ মার্চ আদালতে মামলা করেন। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে চলতি বছরের ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম রায়ে তাপসের জয় বাতিল করে ইশরাককে বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেন।
ইসির অনুরোধে আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে ইশরাকের শপথ রোধে গত ১৪ মে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন ডিএসসিসির বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ। রিটে মেয়র ঘোষণা করা ট্রাইব্যুনাল বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থারও আবেদন জানানো হয়। ২২ মে হাইকোর্ট রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের হলে আপিল বিভাগ সেটির শুনানি শেষে আজ পর্যবেক্ষণ দেয়—ইশরাকের শপথ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে ইশরাক–সমর্থকরা ডিএসসিসির নগর ভবনে টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালেও নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেও তারা ‘দায়িত্ব বুঝিয়ে দাও‘ ‘গেজেট বাস্তবায়ন কর‘—এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
অবস্থানকারীরা অভিযোগ করেন, আদালতের নির্দেশ ও গেজেট প্রকাশের পরও সরকারের পক্ষ থেকে শপথ অনুষ্ঠান নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। তারা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও তোলেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, ইশরাক হোসেন দায়িত্ব না পাওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এর আগে ১৪ মে থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন মাঝে কাকরাইল এলাকায় রাস্তায় নেমে অবরোধে রূপ নেয়। ৪৮ ঘণ্টার বিরতির পর বৃহস্পতিবার আবারও নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।