ইউরিয়াসহ সকল সারের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং বিএডিসি’র মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে কৃষকদের মাঝে সার-বীজ-কীটনাশক সরবরাহের দাবিতে বৃহস্পতিবার ( ১৩ এপ্রিল) সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট গাইবান্ধা জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিল পুর্বে জেলা শহরের ২নং ট্রাফিক মোড় ও পুরাতন বাজারের সামনে সমাবেশ অনুুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন জেলা সদস্যসচিব মনজুর আলম মিঠু, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের জেলা সংগঠক জাহিদুল হক, ওয়ারেছ মন্ডল রাঙ্গাা, নারীমুক্তি কেন্দ্রের জেলা সংগঠক অধ্যাপক রোকেয়া খাতুন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের জেলা আহবায়ক শামিমআরা মিনা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বিশ্ব বাজারে যখন সারের দাম কমছে, তখন বাংলাদেশে ইউরিয়াসহ সকল সারের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অন্যায় এবং অযৌক্তিক। তারা অবিলম্বে সারের বর্ধিতমূল্য প্রত্যাহার করে আগামীতে বিএডিসি’র মাধ্যমে সার-বীজ-কীটনাশক কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করার দাবি জানান। তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ, দেশের মোট শ্রম শক্তির অর্ধেক কৃষি খাতে নিয়োজিত। অথচ সম্ভাবনাময় এই খাতটি সবচেয়ে অবহেলিত। সার, বীজ,কীটনাশক, সেচ, বিদ্যুৎসহ সকল কৃষি উপকরণের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সার, বীজ, কীটনাশকে ভেজাল দিয়ে মুনাফা লুটছে। কৃষক লাভজনক দাম তো দূরের কথা, ফসলের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছে না। ফলে ক্ষুদ্র কৃষক জমি হারিয়ে ভ‚মিহীন এবং মাঝারি কৃষক গরীব কৃষকে পরিণত হচ্ছে। খরা, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। করোনাকালেও কৃষক ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রেখে ১৮ কোটি মানুষের মুখে অন্ন যুগিয়েছে। সরকার যে কৃষি প্রণোদনার কথা বলছে তা ধনী কৃষক বা উৎপাদনের সাথে যারা যুক্ত নয় তারাই পাচ্ছে, দলীয়করণ-দুর্নীতির ফলে প্রকৃত কৃষক কিছুই পাচ্ছে না। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলোই সবচেয়ে বিপর্যস্ত।
ক্ষেতমজুরদের এমনিতেই বছরে ৯ মাস কাজ থাকে না ফলে সারা বছরের কাজ ও খাদ্যের নিশ্চয়তা নেই। উপরন্তু কৃষিতে ক্রমাগত যান্ত্রিকীকরণের ফলে তাদের কাজ আরও সীমিত হচ্ছে, যা বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সেই সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। কাজের প্রয়োজনে নিজ এলাকার বাইরে গেলে সেখানে নিরাপদ যাতায়াতসহ স্বাস্থসম্মত খাদ্য ও আবাসনের কোন আয়োজন থাকেনা। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ নিয়েও চলে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি। তহশিল অফিস, ভ‚মি অফিস, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, পুলিশ থানা ও ব্যাংকে ঘুষ-দুর্নীতি-হয়রানির শিকার হচ্ছে কৃষক। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মেরে দিচ্ছে পাচার করছে, সেই ঋণখেলাপী ব্যাংক ডাকাতদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বরং সমাদর করা হচ্ছে । অথচ ১০/২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফসলের দাম না পাওয়া ও বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হওয়ায় পরিশোধ করতে না পারলে কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কো¤পানির বন্ধ্যা বীজ কৃষিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। কৃষক কৃষি উপকরণ কিনতেও ঠকে, ফসল উৎপাদন করে বেচতেও ঠকে। তাই আসন্ন জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতে উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০ ভাগ বরাদ্দ দিয়ে কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুরদের রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, প্রতিবছর শ্রমশক্তি যতই বাড়ছে সেই তুলনায় কর্মসংস্থান বাড়ছে না। কিন্তু রাষ্ট্রীয় শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করা হচ্ছে ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চলছে ছাঁটাই। চাল-ডাল-আটা-ভোজ্যতেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু দেশে শ্রমিক, কৃষক, চাকরিজীবী, ছোট দোকানদারসহ সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। জ্বালানি তেল ও সকল পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে। শিক্ষা-চিকিৎসার খরচ, বাড়িভাড়া ক্রমাগত বাড়ছে।
তাই আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে শ্রমজীবী ও নি¤œআয়ের মানুষের জন্য সারাদেশে আর্মিরেটে রেশনে নিত্যপণ্য সরবরাহ করার জোর দাবি জানান।
আল/দীপ্ত সংবাদ