জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে বিশ্বের সম্মিলিত বিবেকের প্রতি অপমান বলে নিন্দা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আ্যান্তোনিও গুতেরেস।
ইউক্রেন যুদ্ধের বর্ষপূর্তির দুই দিন আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক বৈঠকে তিনি এ নিন্দা জানান। “এই আক্রমণ আমাদের সম্মিলিত বিবেকের প্রতি অপমান। এটি জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন”
গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরু করে রাশিয়া। বৈঠকে ইউক্রেন এবং তার মিত্রদের সমর্থনে রাশিয়াকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে সেনা প্রত্যাহার করার দাবিতে প্রস্তাব তোলা হলে বিতর্ক তৈরি হয়। এ সময় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা গোটা বিশ্বকে যুদ্ধে নিমজ্জিত করার চেষ্টা করছে।
এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে বিশ্বকে সতর্ক করেছেন । তিনি বলেছেন, এই সংঘাত আরও জটিলতর হচ্ছে এবং বিশ্ব সম্ভবত একটি বৃহত্তর যুদ্ধের ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
গুতেরেস বলেন, “এই যুদ্ধ আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতাকে উস্কে দিচ্ছে এবং বিশ্বব্যপী উত্তেজনা ও বিভক্তিতে ইন্ধন দিচ্ছে। পাশাপাশি এটি অন্যান্য সঙ্কট থেকে মনোযোগ ও সম্পদ সরিয়ে নিয়ে বৈশ্বিক ইস্যুগুলোকে চাপা দিচ্ছে।” তিনি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, এই যুদ্ধের কারণে ‘পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পরোক্ষ হুমকি’ দেখা দিয়েছে। রাশিয়া অবিলম্বে বিনাশর্তে প্রতিবেশী দেশটি ছেড়ে যাবে, ইউক্রেন ও তার মিত্রদের এমন দাবি নিয়ে তোলা প্রস্তাবের বিষয়ে বৈঠকটিতে বিতর্ক হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। এ প্রস্তাবে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো তাদের প্রতি সংহতি জানাবে বলে আশা করছে ইউক্রেন। ইতোমধ্যে ৬০টি দেশ প্রস্তাবটিতে সমর্থন জানিয়েছে।
অপরদিকে ক্রেমলিন অভিযোগ করেছে, পশ্চিমারা যে কোনো মূল্যে রাশিয়াকে পরাজিত করতে চাইছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নিবিয়েনজিয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা পুরো বিশ্বকে যুদ্ধে ডুবিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন প্রায় ২ লাখের মতো সেনা পাঠিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় আক্রমণের সূচনা করেন। এবং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তিন লাখ রিজার্ভ সেনা প্রস্তুত করার ঘোষণা দেন।
তখন থেকে শুরু হওয়া ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত ৭১৯৯ জন বেসামরিক নিহত ও আরও হাজার হাজার আহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘের অনুমিত হিসাব থেকে জানা গেছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেন প্রত্যেকেরই অন্তত ১ লাখ সেনা হতাহত হয়েছে। যুদ্ধের কারণে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে, তারা ইউক্রেনের ভেতরে অথবা অন্য দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়ে আছে।
অনু/দীপ্ত সংবাদ