শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪

আ.লীগের ১৪ বছরে সড়কে দুর্নীতি ৫১ হাজার কোটি টাকা

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪ বছরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দের ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়েছে। টাকায় যার পরিমাণ ২৯ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকা।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই হিসাব তুলে ধরেছে। তারা বলেছে, ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে এই দুর্নীতি হয়েছে। পক্ষগুলো হলো মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনীতিক, আমলা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ঠিকাদার।

বুধবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ‘সড়ক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়।

টিআইবির গবেষণাটিতে ঠিকাদার, সড়ক বিভাগের আমলা ও প্রকৌশলীসহ ৭৩ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় এবং ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসবের ভিত্তিতে টিআইবি একটি প্রকল্পে মোট বরাদ্দের কত শতাংশ ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ব্যয় হয়, তা হিসাব করেছে।

২০১৭১৮ অর্থবছর থেকে ২০২১২২ অর্থবছরের মধ্যে সমাপ্ত প্রকল্পগুলো গবেষণাটির আওতায় আনা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরুর সময় ২০১০১১ থেকে ২০১৮১৯ পর্যন্ত।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জনস্বার্থে নেওয়া প্রকল্পগুলোতে রাজনীতিবিদ, আমলা ও ঠিকাদারদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাত রয়েছে। একেবারে নিম্নপর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত এসব দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগে ঘুষ লেনদেনে ২৩৪০ শতাংশ অর্থ লোপাট হয়। ত্রিপক্ষীয় ‘সিন্ডিকেট’ (চক্র) ভাঙতে না পারলে দুর্নীতিবিরোধী কোনো কার্যক্রম সফল হবে না।

সড়ক নিয়ে গবেষণাটি করেছেন টিআইবির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মো. জুলকারনাইন ও গবেষণা সহযোগী মো. মোস্তফা কামাল। তাঁরা দুজনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে জানান, ২০০৯১০ অর্থবছর থেকে ২০২৩২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সড়ক ও সেতু খাতে সরকারের মোট অর্থ বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ২০১৩১৪ থেকে ২০২৩২৪ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ব্যয়ের ৭২ শতাংশ কাজ পেয়েছে ১৫টি ঠিকাদার।

বরাদ্দের কত শতাংশ দুর্নীতি

সড়কের প্রকল্পে স্তরভেদে দুর্নীতির হার ভিন্ন। টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে হারগুলো তুলো ধরা হয়।

# প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের লাইসেন্স ভাড়া নেওয়া, কোনো ঠিকাদারের প্রাপ্ত কার্যাদেশ কিনে নেওয়া, নিয়মের বাইরে উপঠিকাদার নিয়োগ (সাবকন্ট্রাক্ট), প্রতিযোগী ঠিকাদারের সঙ্গে সমঝোতা, স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক চাঁদাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্যাদেশের মোট অর্থমূল্যের ২ থেকে ৬ শতাংশ দুর্নীতি হয়।

# নির্মাণকাজের কার্যাদেশ পাওয়া ও ঠিকাদারকে বিল পেতে ঘুষের পরিমাণ বরাদ্দের ১১ থেকে ১৪ শতাংশ।

# নির্মাণকাজে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে দুর্নীতির হার ১০ থেকে ২০ শতাংশ।

টিআইবি বলছে, ঠিকাদার, সংশ্লিষ্ট বিভাগের তৎকালীন মন্ত্রী, কয়েকজন তৎকালীন সংসদ সদস্য ও রাজনীতিবিদ এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির টাকা ভাগাভাগি হয়েছে। এর ফলে ঠিকাদারেরা নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করেছেন। উপকরণ যতটুকু দরকার, তার চেয়ে কম ব্যবহার করেছেন। সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশলীরা এই অনিয়মদুর্নীতির সুযোগ করে দিয়েছেন।

টিআইবি দুর্নীতির কিছু উদাহরণও তুলে ধরেছে। যেমন একটি প্রকল্পে বৃক্ষরোপণে ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু একটি গাছও লাগানো হয়নি।

ঠিকাদারদের রাজনৈতিক আনুকূল্য

টিআইবি বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা সরাসরি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আনুকূল্য পাওয়ায় নিম্নমানের কাজ করা বা প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির জন্য তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না। কয়েকজন ঠিকাদারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দৃষ্টান্ত নেই।

টিআইবি আরও বলছে, কিছু ঠিকাদারের রাজনৈতিক প্রভাব ও উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগসাজশ থাকায় তাঁদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। জালিয়াতি করায় গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ৩৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ওপর বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তবে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ পেয়েছে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুবই নিম্নমানের প্রকল্প প্রস্তাব ও ফরমায়েশি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে বলেই গবেষণায় দেখিয়েছে টিআইবি। তারা তুলে ধরেছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়নের নজিরও রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প অনুমোদন সভায় দ্রুততার সঙ্গে প্রস্তাব উত্থাপন এবং গোপনে প্রকল্প প্রস্তাব মূল্যায়ন–সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে সওজর কোনো কোনো কর্মকর্তা পরিকল্পনা কমিশনের কিছু কর্মচারীদের ২ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিয়েছেন।

টিআইবি বলছে, প্রকল্প নেওয়ার সময় অনিয়মদুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়। কখনো কখনো মোট প্রাক্কলিত বাজেটের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দাঁড়ায়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের নানা প্রকল্পের তথ্য চাইতে গেলে অনেক তথ্য আমাদের দেওয়া হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা, যেসব তথ্য প্রকাশযোগ্য, সেগুলো যেন প্রকাশ করা হয়। তবে বাস্তব কথা হলো প্রতিষ্ঠানে কিছু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে, তবে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার তো পরিবর্তন হয়নি। তাই রাতারাতি পরিবর্তন আশা করছি না।’

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদন শুধু দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বিদেশি অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতেও কমবেশি দুর্নীতি হয়েছে। দেশীয় আমলাতন্ত্রের সঙ্গে বিদেশি আমলাতন্ত্রের যোগসাজশ হয়েছে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির পরিচালক (আউটরিচ ও কমিউনিকেশন) তৌহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) সুমাইয়া খায়ের।

 

সুপ্তি/ দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More