চলতি মাসের শেষ দিকে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এ উৎসব ঘিরে সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে ও সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজ বিশেষ সভা ডেকেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা থেকে অনলাইনে (জুমে) শুরু হওয়া এ সভায় পূজাকে শান্তিপূর্ণ রাখতে ১৮ দফা নির্দেশনা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।
সভায় ৮ বিভাগের কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপাররা (এসপি) অংশ নেবেন। এ ছাড়া সচিবালয় থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি যুক্ত হবেন।
দুর্গাপূজা নিয়ে প্রস্তুত ১৮ দফা নির্দেশনা হলো–
১. দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব এবং আনসার ও ভিডিপির দৃশ্যমান টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে বলা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
২. যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে। অপ্রত্যাশিতভাবে কোনো ঘটনার সূত্রপাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩. দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে পূজামণ্ডপগুলো পরিদর্শন করতে হবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এরূপ কোনো বক্তব্য বা গুজব ছড়ানোর বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
৫. সংশ্লিষ্ট পূজা উদযাপন কমিটিগুলোকে পূজামণ্ডপগুলোতে সার্বক্ষণিক পাহারার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও পাহারাদার নিয়োজিত করতে হবে।
৬. প্রতিটি পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক মোতায়ন করতে হবে।
৮. হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা বিধানে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ছাত্র–জনতাকে অন্তর্ভুক্ত করে মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) এরূপ কমিটি গঠন করবেন।
৯. পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যদের সংশ্লিষ্ট পূজামণ্ডপে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করতে হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিদ্যুৎ বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোবাইল নম্বর মন্দির বা মণ্ডপ প্রাঙ্গণে দৃশ্যমান স্থানে ঝুলিয়ে রাখার ও জেলা ও উপজেলা সব সরকারি ওয়েবসাইটে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. পূজায় বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের ওপর কড়া নজরদারি অব্যাহত রাখাসহ পূজামণ্ডপের ভেতরে ব্যাগ বা সন্দেহজনক কোনো কিছু নিয়ে কেউ যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রতিমা তৈরি থেকে পূজা সমাপ্তি পর্যন্ত প্রতিটি মন্দির বা মণ্ডপে নিজস্ব উদ্যোগে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
১২. প্রতিমা যেন ভাঙচুর না হয়, সেদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১৩. প্রতিমা বিসর্জনস্থল ও মণ্ডপগুলোয় পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করতে হবে। মণ্ডপে নারী দর্শণার্থীদের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করতে হবে।
১৪. স্থানীয় বখাটেদের দ্বারা পূজামণ্ডপে আসা নারীদের উত্ত্যক্ত করা ও ইভটিজিং রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৫. পূজা চলাকালে পটকা ও আতশবাজি পোড়ানো বন্ধসহ স্থায়ীভাবে আতশবাজির উপকরণ বিক্রি ও পোড়ানো নিষিদ্ধকরণের লক্ষ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৬. স্থানীয়ভাবে পূজামণ্ডপের পার্শ্বে উপযুক্ত স্থানে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করা এবং বিসর্জনস্থলে পর্যাপ্ত আলো ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
১৭. প্রতিমা বিসর্জনের সময় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল স্ট্যান্ডবাই থাকা।
১৮. যেসব পূজামণ্ডপে যাতায়াতের রাস্তা ব্যবহারের অনুপেযোগী, সেসব রাস্তা সাময়িক মেরামতের ব্যবস্থা নিতে হবে।
শুধু দুর্গাপূজাই নয়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ সভায় প্রশাসনের সর্বস্তরে সতর্কবার্তা দেওয়া হবে।
এসএ