বিজ্ঞাপন
রবিবার, আগস্ট ৩, ২০২৫
রবিবার, আগস্ট ৩, ২০২৫

আমরা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছি: ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর আর্তনাদ

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ব মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর মানুষের চরম বিশ্বাস ছিল। কিন্তু ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গাজার আজকের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সেসব যেন ধুলোয় ঢাকা কোনো গল্প।

এখন সেখানে প্রতিদিনকার দৃশ্য— শুকিয়ে যাওয়া শিশুদের কঙ্কালসার দেহ, খাবারের আশায় হাত বাড়িয়ে থাকা মানুষের সারি এবং বাবামায়ের অসহায় কান্না—যাদের চোখের সামনেই অনাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে সন্তানরা।

আমার ৫ বছরের মেয়ের ওজন এখনও মাত্র ১১ কেজি,’ বলছিলেন গাজার ৩৮ বছর বয়সী জামিল মুঘারি। তিনি বলেন, আমার ছেলের শরীরে চামড়া আর হাড় ছাড়া কিছু নেই। যুদ্ধ শুরুর পর আমি নিজেও ৩০ কেজি ওজন হারিয়েছি।

এটিই এখন গাজার প্রত্যাহিক চিত্র— শুধু যুদ্ধ নয়, এখন ক্ষুধাই হয়ে উঠেছে এখানকার নতুন মারণাস্ত্র।

দুর্ভিক্ষ: এখন আর আশঙ্কা নয়, বাস্তবতা

গত সপ্তাহে জাতিসংঘসমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা এখন চরম মাত্রার দুর্ভিক্ষে পতিত হয়েছে।

আইপিসি জানায়, গাজায় ২২ লাখ মানুষকে যেন একটি বন্দি চেম্বারে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে বাইরে থেকে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, আর ভেতরে কোনো খাদ্য নেই, কর্মসংস্থান নেই, আশ্রয় নেই— আছে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর কান্না।

মুঘারি বললেন, ‘আমি ও আমার পরিবার এমনও দিন কাটাই যেদিন খাবারের জন্য একেবারেই কিছু খুঁজে পাই না। সেসব দিন শুধু পানি খেয়ে পেট ভরাতে হয়। খাবার না পেয়ে এমন হয়েছে, মাঝেমধ্যে হাঁটতে গিয়েও দুর্বলতার কারণে পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলাই। কারণ, সন্তানরা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।’

সহায়তার নামে বিভ্রান্তি

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলনিয়ন্ত্রিত গাজার চারটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য খোলা থাকে। খাবারের নাগাল পেতে গাজাবাসীকে হাজারো মানুষের ধাক্কাধাক্কি, বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে হয়। আর ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর ওপর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নির্বিচারে গুলির ঘটনা তো আছেই।

প্রতিবেদনে খাবারের সন্ধানে যাওয়া একজন তরুণের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ওই ফিলিস্তিনি তরুণ নিজের পরিবারের জন্য খাবারের সন্ধানে গিয়ে লাশ হয়ে আত্মীয়দের কাঁধে করে ফিরছেন।

এমন সব মর্মান্তিক ঘটনা গাজাবাসীর জন্য যেন নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আবু আলআবেদ নামের আরেক গাজাবাসী বললেন, ‘আমার মেয়ের বুকের হাড় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। খাবার নেই, ওর মাথা ঘোরে, দুর্বলতায় পড়ে যায় সে। অথচ বাজারে যা পাওয়া যায়, সেগুলোর এত দাম দিয়ে কেনার সাধ্য আমাদের নেই।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার, সহানুভূতি—এসব এখন কেবল স্লোগান। যদি গাজায় পশুদের অধিকার রক্ষার কথা উঠতো, হয়তো অনেক আগে বিশ্ববাসী কোনো একটি ব্যবস্থা নিত।’

এদিকে, ৫৮ বছর বয়সী বিধবা মানসুরা ফাদল আলহেলো বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। আমি ত্রাণ সহায়তা ট্রাকগুলোর আশপাশে যেতে দেই না। যদি গুলি খায়! আমি আর হারাতে পারব না। আমি ছেলেকে শহীদ হয়ে ফিরতে দেখতে চাই না।’

রাজনৈতিক প্রতীক না, চাই বাস্তব সহায়তা

ব্রিটিশ সরকার সেপ্টেম্বর নাগাদ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে অনেক গাজাবাসীর মতোই, মানসুরা এই সিদ্ধান্তে আশাবাদী নন।

রাষ্ট্র যদি সার্বভৌম না হয়, আত্মরক্ষার অধিকার না থাকে, তাহলে সেটা কি সত্যিকারের স্বীকৃতি? আমরা চাই বাস্তব অধিকার,’ —বললেন তিনি।

মানবতার জন্য এখনই সময়

গত সপ্তাহে গাজা দুইটি ভয়াবহ মাইলফলক ছুঁয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা যাওয়াদের যোগ করলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

গাজাবাসীর প্রতিটি অশ্রু ফোঁটা যেন একটা প্রশ্ন— এই পৃথিবীতে মানুষের জীবন কি এতটাই মূল্যহীন? কাঁপা কণ্ঠে বিশ্ববাসীর প্রতি জামিল মুঘারির প্রার্থনা, ‘আমরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছি। আমাদের এই বিপর্যয় থেকে বাঁচান।’

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More