চাঁদপুর নতুন বাজার শাখায গ্রাহকের ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন পূবালী ব্যাংক ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী (৪০)। এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী। আর কোনো গ্রাহকের টাকা নিয়েছেন কিনা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। এদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেছে।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে বর্তমান দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির, মডেল থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা নজরুল ও গ্রাহকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ব্যাংক কর্মকর্তা শ্রীকান্ত নন্দীর গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ঘাগড়া গ্রামে। তিনি সপরিবারে দেশের বাইরে চলে গেছেন। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি চাঁদপুর নতুন বাজার শাখায় যোগ দেন তিনি। এর আগে তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি শাখায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
৮ এপ্রিল গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় গেলে ৯ এপ্রিল থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আকবর হোসেন লিটন নামের এক গ্রাহকের ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ৮ এপ্রিল ব্যাংকে জামা দেয়ার কথা থাকলেও টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন ওই ব্যাংক ম্যানেজার। এছাড়া আরও এক গ্রাহক থেকে আগেই ৭৫ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর হোসেন লিটন বলেন, ব্যাংকের ব্যবস্থপক শ্রীকান্ত নন্দী এখানে যোগদানের পর থেকেই তার সাথে পরিচয়। ঈদের পূর্বে সে আমার কাছ থেকে টাকা ধার চায়। কয়েকদিনের মধ্যে দিয়ে দিবে বলে। আমি সরল বিশ^াসে তাকে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দেই। কিন্তু সে টাকা নিয়ে দিয়ে ব্যাংক থেকে চলে যায়। কিভাবে কি করল তা বুঝে উঠতে পারিনি। এই ঘটনায় আমি ১৩ এপ্রিল চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি জিডি করেছি।
আরেক গ্রাহক কচুয়া উপজেলার আশ্রাফুর এলাকার দলিল লেখক মারুফ। অধিক মুনাফা দিবে বলে তার কাছ থেকে ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী নেন ৭৫ লাখ টাকা। মারুফের আত্মীয় একই ব্যাংকের গ্রাহক নাছির উদ্দিন খান বলেন, সে অধিক মুনাফা দিবে বলে আমার আত্মীয় মারুফের কাছ থেকে ৭৫ লাখ টাকা নেয়। টাকা না দেওয়ায় ঈদের পূর্বে তার সাথে দুই বার বৈঠকে বসা হয়েছে। ঈদের পরে টাকা ফেরৎ দিবে বললেও এখন তিনি নিখোঁজ।
এদিকে শ্রীকান্ত নন্দী গত ৪ এপ্রিল বিকাল ৩টার পরে ব্যাংক থেকে নিখোঁজ উল্লেখ করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় জিডি করেছেন বর্তমান দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির। তিনি ওই জিডিতে উল্লেখ করেন শ্রীকান্ত নন্দীর ব্যাক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
দায়িত্বরত শাখা ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবির বলেন, ঈদের পূর্বে শেষ কর্মদিবসে আমাকে এই শাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আজকেই এই শাখায় যোগদান করেছি। শ্রীকান্ত নন্দীর নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে অনেক খোঁজখুঁজি করে না পেয়ে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বিষয়টি অবগত করা হয়েছে এবং থানায় জিডি করা হয়েছে। ঘটনটি তদন্ত চলছে। আমাদের অভ্যন্তরীন গ্রাহকদের লেনদেনে কোন সমস্যা নেই।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) নজরুল বলেন, ঈদের পূর্বে ৯ এপ্রিল পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. হুমায়ুন কবির ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী নিখোঁজ রয়েছেন মর্মে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। সে ডায়েরীর আলোকে আমাকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি। লেনদেনের বিষয়ে কোন অভিযোগ থাকলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
নজরুল / সুপ্তি / দীপ্ত সংবাদ