আজ ২২ নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওরের তেরশ্রী গনহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে রাজাকার, আলবদর আলসামস বাহিনীর সহযোগিতায় পাকবাহিনী বর্বোরচিত নারকীয় হত্যাযঞ্জের মাধ্যমে তৎকালীন তেরশ্রী গ্রামের জমিদার সিদ্ধেশরী প্রসাদ রায় চৌধুরীকে পুড়িয়ে এবং অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩জন গ্রামবাসীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯সালে শহীদ স্মরণে সেখানে একটি দৃস্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করেন। কিন্তু দেশ স্বাধীনের ৫২ বছর পরও বর্বোরচিত নারকীয় হত্যাযঞ্জের সুষ্ঠ বিচার হয় নি।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার (২২ নভেম্বর) সকালে ঘিওর উপজেলা প্রশাসন একটি শোক র্যালী বের করে। এ সময় জেলা প্রশাসক রেহানা আকতার,জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাভোকেট গোলাম মহীউদ্দিন, ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) আমিনুল ইসলামসহ সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১সালের ২১ নভেম্বর গভীর রাতে দেশের পাকিস্থানি দালালদের সাথে নিয়ে পাক–হানাদারবাহিনী তেরশ্রী গ্রামের সেনপাড়া কালিবাড়ী মাঠে গোপন মিটিং করে। এরপর ২২ নভেম্বর সূর্যোদয়ের আগ মুহূর্তের আগেই কনকনে শীতের ভোরে হামলা চালিয়ে নিরিহ জনগণের উপর হত্যাযঞ্জ চালায় এবং ঘুমন্ত নিরিহ জনগণের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। মাত্র ৬ ঘন্টার হামলা চালিয়ে গুলি করে, আগুনে পুড়িয়ে ও বন্দুকের ব্যানোটের আঘাতে জমিদার সিদ্ধেশরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩জন গ্রামবাসীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। মাত্র কয়েকঘন্টার মধ্যেই তেরশ্রী গ্রামটি নরকে পরিণত করে পাকহানাদাররা।
মুক্তিযোদ্ধারা আরো জানান, তেরশ্রী গ্রামের মানুষরা ছিলেন সাংস্কৃতিক মনের। বাম রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দু ছিল তেরশ্রী গ্রামটি এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সব চেয়ে বেশি আনাগোনা ছিল তেরশ্রীতে। এরজন্যই যুদ্ধের সময় শিক্ষানুরাগী, মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবিদের তালিকা করে পাকিস্থানীদের মাধ্যমে হত্যাযঞ্জের মাধ্যমে গ্রামের মানুষসহ গ্রামটিকে ধ্বংস করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা টাইগার লোকমান হোসেন জানান, ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের বিরোধী প্রতিটি আন্দোলনে তেরশ্রী গ্রামের মানুষ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার করেছেন। কিন্তু তেরশ্রীর বর্বোরচিত নারকীয় হত্যাযঞ্জের সাথে দেশীয় অনেকে জড়িত আছে। জড়িতদের অনেকে এখনও জীবিত আছেন, কিন্তু তাদেরকে এখনো বিচার করা হয় নি। জড়িতদের দ্রুত আইনের মাধ্যমে বিচারের দাবিও করেন তিনি।
জাহিদুল চন্দন/ আল/ দীপ্ত সংবাদ