সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

এলপিজি খাতের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের উপর আলোকপাত

দীপ্ত নিউজ ডেস্ক
5 minutes read

বাংলাদেশে বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। তাই এলপিজি ব্যবহারে সতর্কতা এবং এ সংক্রান্ত সচেতনতা আগের তুলনায় অনেক বেশি জরুরী। পাশাপাশি সরকারেও এ খাতের প্রতি নীতিসহায়তাসহ দৃষ্টি দেয়া জরুরী।

বাংলাদেশের বৃহত্তম এলপি গ্যাস অপারেটর ওমেরা কর্তৃক আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার উপর ক্লিন ফুয়েল হিসাবে এলপিজির প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বিষয়গুলো উঠে এসেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবসে ওমেরার কর্পোরেট কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভার লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মক্ষেত্রের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমর্থনের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করা। ‘পরিবর্তনশীল জলবায়ুতে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা’ প্রতিপাদ্যে গোলটেবিল আলোচনায় উঠে আসে, বাংলাদেশের এলপিজি সেক্টরের বর্তমান প্রবৃদ্ধি ও এই সেক্টরের বিভিন্ন বিধিমালা। পাশাপাশি এলপিজির স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিভিন্ন প্রভাবও অন্বেষণ করা হয়।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জনাব নুরুল আমিন গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন ওমেরা এলপিজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তানজিম চৌধুরী।

এছাড়া গোলটেবিল বৈঠকে হেলাল উদ্দিন এনডিসি, বিইআরসি সদস্য (গ্যাস); মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, প্রধান পরিদর্শক, বিস্ফোরক অধিদপ্তর; মোঃ কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, বিএফএম, ডেপুটি ডিরেক্টর (অপারেশনস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর; মেজর (ইঞ্জি.) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (অব.), সদস্য (উন্নয়ন), রাজউক; লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব); ইমরান হাসান, মহাসচিব, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি; জহির খান, সভাপতি, শেফস ফেডারেশন অব বাংলাদেশ; এইচএম হাকিম আলী, সভাপতি, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশন এবং মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার, মহাসচিব, এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলওএবি) প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন।

বৈঠকে বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের উপর এলপিজির প্রভাব গভীর এবং ইতিবাচক। অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানী যেমন কয়লা এবং তেলের তুলনায়, এলপিজি উল্লেখযোগ্যভাবে কম দূষক নির্গত করে। কয়লার চেয়ে ৩৩ শতাংশ কম এবং তেলের তুলনায় ১২ শতাংশ কম কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে। পরিবেশ সংরক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে, মাত্র এক মেট্রিক টন এলপিজি ৪৭টি পূর্ণ বয়স্ক গাছের সমতুল্য পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারে, যা বন উজাড় কমাতে ভূমিকাকে রাখছে। এছাড়া, এলপি গ্যাসে রান্নার ফলে ধোঁয়া উৎপন্ন হয়না। এতে একদিকে যেমন ক্ষতিকারক দূষণের সংস্পর্শকে হ্রাস করে, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও কম ঝুঁকিপূর্ণ। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, এলপি গ্যাস পরিবেশ এবং মানুষ উভয়ের জন্যই একটি টেকসই এবং স্বাস্থ্যকর জ্বালানী।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের এলপিজি সেক্টরে ক্রস-ফিলিং, এলপিজি ব্যবহার সম্পর্কে অপর্যাপ্ত সচেতনতা, মিডিয়া যোগাযোগে ভুল তথ্য এবং এলপিজি সিস্টেমের অনুপযুক্ত নকশা ও ইনস্টলেশনের মতো কারণগুলোকে এ খাতের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ‍চিহ্নিত করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, একসময় গ্রামের মায়েরা রান্না করার সময় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যেতেন। কাঠ দিয়ে রান্না করার কারণে ধোঁয়ায় আমি আমার মায়ের চোখের পানি দেখেছি। এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার আসার পর সেই ভোগান্তি থেকে গ্রামের গৃহিনীরা মুক্তি পেয়েছেন। আমরা চাই এলপিজির ব্যবহার আরও ব্যাপক হারে বাড়ুক।

নুরুল আমিন বলেন, আমি সরেজমিন পরিদর্শনে এলপিজির পরিবহন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি নিরাপদ হিসেবে দেখতে পেয়েছি। প্রতিমাসের শুরুর সপ্তাহে এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা করে বিইআরসি। আমরা দেখেছি, বিইআরসির নির্ধারিত মূল্যে একমাত্র ওমেরা এলপিজি বিক্রি করে। এ জন্য ওমেরা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বিইআরসি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন আরও বলেন, এলপিজি ব্যবহার নিরাপদ করার জন্য আমরা বিধি এবং নির্দেশিকা প্রণয়ন করবো। যাতে এ বিষয়ে দায়বদ্ধতার পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টি হয়। এ খাতের অবারিত সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ খাতভিত্তিক পরিকল্পনা খুব জরুরী।

দেশে এলপিজির বিশাল বাজার রয়েছে উল্লেখ করে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আগে আমরা গ্রামে দেখতাম মাছের বাজার, পরে দেখেছি গাছের বাজার। এখন গ্রামীণ পর্যায়ে আমরা এলপিজির বাজার দেখি।

এসময় খাতসংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার, ব্যবসায়ী এবং অন্যান্যদের নিয়ে কর্মশালা আয়োজনের ঘোষণা দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডারের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। তাই এলপিজি ব্যবহারে সতর্কতা এবং এ সংক্রান্ত সচেতনতা আগের তুলনায় অনেক বেশি জরুরী। পাশাপাশি সরকারেও এ খাতের প্রতি নীতিসহায়তাসহ দৃষ্টি দেয়া জরুরী।

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, অনেকক্ষেত্রে না জেনেই এলপিজি সিলিন্ডার নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা করা হয়। বেইলি রোডের দূর্ঘটনাসহ গত আড়াই মাসে ঢাকা এবং গাজীপুরের তিনটি বড় ঘটনায় সিলিন্ডার বিস্ফোরনের কথা বলা হলেও আমরা সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মত তেমন কোনো আলামত বা প্রমাণ পাইনি। এর ব্যবহার নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উঠতে পারে, কিন্তু সিলিন্ডারের মান নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন থাকে না। এছাড়া আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী সিলিন্ডার একটি নির্দিষ্ট সময় পর (১০ বছর পর রি-টেস্ট) পুনঃপরীক্ষণ করা কথা বলা আছে।

তিনি প্রতিটি সিলিন্ডারের গায়ে ব্যবহারবিধি ও সতর্কবানী উল্লেখ করার উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে অনেক অপারেটরকে এলপিজির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এসব অপারেটরের অসংখ্য ডিষ্ট্রিবিউটর রয়েছে। তিনি বিশেষ করে এলপিজি পরিবহন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ডিষ্ট্রিবিউটরদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বাণ জানান।

রাজউক সদস্য (উন্নয়ন) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (অব.) বলেন, ভবন তৈরির ক্ষেত্রে রাউজক অনেক আগে থেকেই গ্যাস সিলিন্ডারের জন্য আলাদা কাঠামো তৈরি করেছে। আগামীতে গ্যাস ট্যাংক করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজউকের।

এলওএবি মহাসচিব মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, আগামীতে এলপিজি হতে পারে দেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসা। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে এই খাতে। তবে এ শিল্পের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। দেশে মাত্র ২ শতাংশ উৎপাদিত হয়। দেশে এলপিজির ব্যবহার এক দশকে বহু গুণ বেড়েছে। ২০১৯ সালে ব্যবহার প্রায় ১০ লাখ টনে এবং গ্রাহক সংখ্যাও ৩৮ লাখে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে চাহিদা ছিল মাত্র ৪৭ হাজার টনের। চাহিদা ২০৩০ সালে ৩০ লাখ টনে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এলপিজি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (এলওএবি) এর পূর্বাভাস অনুসারে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত এলপিজির চাহিদা বার্ষিক প্রায় ৭.৪% হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যেহেতু প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ হ্রাস পাচ্ছে এবং এলপিজির দাম ওঠানামা করছে, শিল্প খাত এলপিজিকে বিকল্প জ্বালানির উৎস হিসেবে ব্যবহারে ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশে এলপিজির গড় মাসিক বাজারের আকার প্রায় দেড় লক্ষ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ওমেরাসহ প্রধান ৪টি অপারেটর মোট চাহিদার ৫০ শতাংশের বেশি পূরণ করছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ব্যক্তি-পরিবার থেকে শুরু করে শিল্প পর্যন্ত, এলপিজি খাতের সকল স্তরে টেকসই সমাধানে ওমেরা সবসময় নিবেদিত রয়েছে। বাংলাদেশ এলপিজিকে এরই মধ্যে নির্ভরশীল জ্বালানী হিসাবে গ্রহণ করেছে। তাই ওমেরা স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা মেটাতে প্রস্তুত।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, দেশের বৃহত্তম এলপি গ্যাস অপারেটর ওমেরা। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এ খাতের শ্রমিকদের মানোন্নয়ন এবং গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে, শেফদের জন্য সেফটি ট্রেনিং, কনজ্যুমার অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম, সেফটি সাইন, তাৎক্ষনিক সেবা প্রদাণের লক্ষ্য কল সেন্টার চালু। প্রতিষ্ঠানটির কল সেন্টার নাম্বার ১৬৭৯৭, যে নাম্বারে ফোন দিয়ে এলপিজি সংক্রান্ত যে কোনো সেবার তথ্য পাওয়া যায়।

এছাড়া পরিবর্তিত জলবায়ুতে বিশ্বব্যাপী নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ওমেরা। পাশাপাশি গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওমেরা প্রতিনিয়ত টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রাহকদের জন্য সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করে।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছর ২৮ এপ্রিল পালিত হয় জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে সুস্থ শ্রমিক, শোভন কর্মপরিবেশ, গড়ে তুলবে স্মার্ট বাংলাদেশ’। পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ২৮ এপ্রিল এই দিবসটি পালন করে আসছে

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More