স্ত্রী স্বীকৃতির দাবিতে নীলফামারীর ডোমার পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি অভিজিৎ সর্বজ্ঞ পাপনের (৩০) বাড়িতে অবস্থান নেয়া নারীর অভিযোগে অবশেষে কারাগারে গেলেন তিনি। শুক্রবার (২ জুন) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
অভিজিৎ সর্বজ্ঞ পাপন ডোমার পৌরসভার সাহাপাড়া গ্রামের মৃত দেব রঞ্জন সর্বজ্ঞের ছেলে।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুরে পাপনের বাড়িতে অবস্থান নেন ওই নারী। সম্প্রতি তিনি নীলফামারী সদর থানায় পাপনের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন, ভয়ভীতি ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগটি রেকর্ড করে পুলিশ পাপনকে ডোমারের বাড়ি থেকে আটক করে সদর থানায় নেয়। অপরদিকে ওই নারী পাপনের বাড়িতে স্ত্রীর দাবিতে অবস্থান করছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, গত ১৩ মে রাত একটার দিকে হঠাৎ করে নীলফামারী শহরের মাস্টারপাড়ার ভাড়া বাসায় কিছু লোকজন নিয়ে এসে ওই নারীর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায় পাপন। এ সময় তাকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘পাপনের সাথে ২০১৩ সালে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। ২০১৪ পঞ্চগড়ের বোদেশ্বরি মন্দিরে আমরা বিয়ে করি। বিয়ের পরে ও আমাকে বলে এখন কাউকে জানাইও না এখন। আমার মায়ের হার্টের সমস্যা, আমি আমার মা‘কে আস্তে আস্তে ম্যানেজ করে তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাবো। এখন তুমি ভাড়া বাড়িতে থাকো, আমি যখন সাহাপাড়া নারু সাহা নামে এক লোকের বাড়িতে ভাড়া ছিলাম। সে সময় তার মা আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারে, তার মা আমাকে আজেবাজে ভাষায় গালিগালাজ করে ও তার মা আমাকে মারতে আসে। তারপরে আমি যে বাড়িতে ভাড়া ছিলাম সে বাড়ি ওয়ালা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।‘
তিনি আরও বলেন, ‘তারপর আমরা ডোমার ও নীলফামারী শহরের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি ভাড়া করে সংসার করে আসছিলাম। গত একমাস থেকে পাপন আমার সঙ্গে দেখাও করে না, খোঁজ খবর রাখে না। এমনকি আমার মোবাইল ফোনও রিসিভ করে না। সে অনেক ক্ষমতাবান। তার কাছে মন্ত্রী মিনিস্টার, নেতা, পুলিশ সব তার পকেটে। এখন সে আমাকে স্ত্রী বলে স্বীকার করছে না। আমি যেখানে ভাড়া ছিলাম সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে বুঝতে পারবেন আমার স্বামী কে। আমার জীবন যৌবন সব শেষ করে এখন আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানে না। আমাকে খারাপ বানানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। আমার তিন মাসের পেটের বাচ্চা নষ্ট করে দিছে। আমি তার বাড়িতে অবস্থান নিয়েছি স্ত্রীর মর্যাদা পেতে। সে আমাকে মারধর তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি স্ত্রীর মর্যাদা চাই।‘
বৃহস্পতিবার পাপন বলেন, ‘তার তিনটা স্বামী। সে বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে ব্লাকমেইল করে টাকা খায়। আমার কাছে প্রতারণা করে টাকা চায়। তার একটা ছেলে আছে। আমি একটা অবিবাহিত ছেলে। সে আমার মাকে মেরেছে। আমি একটা অবিবাহিত হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্রাহ্মণ ছেলে। আমার সম্পর্কে এলাকায় সবাই ভালো জানে। সে আজকে পরিকল্পিত ভাবে আমার মাকে মেরে ঘরে ঢুকেছে।‘
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ডোমার থেকে পাপনকে আটক করা হয়। শুক্রবার মামলা দায়েরের পর বিকেলে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
আদালত পুলিশের উপ–পরিদর্শক প্রদীপ কুমার বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে অভিজিতকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদি হাসানের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন/আফ/দীপ্ত নিউজ