আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল, ৮ আগস্ট। তার ঠিক একদিন আগে, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট), প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সরকারের এক বছরের ১২টি উল্লেখযোগ্য অর্জনের তালিকা প্রকাশ করেছেন।
সফিকুল আলমের তুলে ধরা সরকারের ১২ অর্জন
শান্তি ও স্থায়িত্ব পুনরুদ্ধার
জুলাই বিপ্লবের পর শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, বিশৃঙ্খলা ও প্রতিশোধের চক্র প্রতিরোধ করে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নৈতিক নেতৃত্ব একটি স্থিতিশীল শক্তি প্রদান করে, সহিংসতার পরিবর্তে পুনর্মিলন এবং গণতান্ত্রিক নবায়নের দিকে জাতিকে পরিচালিত করে।
অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন
একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে পরিণত করেছে: খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে প্রায় অর্ধেক হয়েছে, সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি হ্রাস ৮.৪৮ শতাংশ (৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন), রেকর্ড রেমিটেন্স ৩০.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, রপ্তানি ৯ শতাংশ বেড়েছে এবং বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ডলার তুলনায় টাকা শক্তিশালী হয়েছে। ব্যাংক স্থিতিশীল হয়েছে।
বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ লাভ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সফল বাণিজ্য শুল্ক আলোচনা সমাপ্ত হয়েছে (কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে আমরা একটি দুর্বল সরকার হিসেবে এটা করতে পারব না)। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (হান্ডা গ্রুপের টেক্সটাইল ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২৫ হাজার চাকরি সৃষ্টিসহ) এবং গত সরকারের সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ এফডিআই প্রবাহ। বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগকারীদের ঢল।
গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং জুলাই চার্টার
সংস্কার কমিশন গঠন, ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এবং ঐতিহাসিক জুলাই সনদ চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসার পথ রোধে কাঠামোগত জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। এই সনদ গণতন্ত্রের এক নতুন যুগের সূচনা করবে।
জুলাই ম্যাসাকারসের জন্য ন্যায়বিচার
জুলাই–আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের স্বচ্ছ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অপরাধীদের জবাবদিহিতা এবং আইনের শাসন জোরদার করা হয়েছে। এরই মধ্যে চারটি বড় মামলার বিচার চলছে। শেখ হাসিনার বিচার শুরু হয়েছে।
নির্বাচনের রোডম্যাপ ও সংস্কার
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবাসী, প্রথমবারের মতো ভোটার হওয়া তরুণ এবং নারীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। নাগরিক মতামতের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু হচ্ছে। নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৮ লাখ পুলিশ, আনসার ও সেনা সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি সংস্কার
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও মজবুত করা হয়েছে।
পুলিশ সংস্কার: মানবাধিকার সেল, বডিক্যাম, স্বচ্ছ জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ, জাতিসংঘ মানের প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণ প্রটোকল চালু।
আইনি সংস্কার: দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধিতে বড় পরিবর্তন, গ্রেফতারের পর ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের কাছে জানানো বাধ্যতামূলক, আইনজীবীর অ্যাক্সেস, চিকিৎসা সুরক্ষা ও অনলাইন জিডির সুযোগ চালু।
প্রেস স্বাধীনতা এবং ইন্টারনেট অধিকার
দমনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল, সব সাংবাদিকের মামলার অবসান, সমালোচনার স্বাধীনতা নিশ্চিত এবং ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট অ্যাক্সেসকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা।
পররাষ্ট্র নীতি পরিবর্তন
একক দেশের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে সরে এসে বহুমাত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতি গড়ে তোলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, চিকিৎসা সহায়তা ও সংকট মোকাবেলায় সহযোগিতা সম্প্রসারণ। সার্কের পুনর্জাগরণ ও আসিয়ানে সদস্যপদ অর্জনের প্রচেষ্টা শুরু।
প্রবাসী ও শ্রমিক অধিকার
আমিরাতে ভিসা পুনরায় চালু, মালয়েশিয়ায় একাধিকবার প্রবেশের ভিসা চালু। উপসাগরীয় অঞ্চলে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দেওয়া। জাপানে ১ লাখ তরুণ পাঠানোর উদ্যোগ এবং ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া ও সার্বিয়ায় আরও শ্রমিক পাঠানোর পরিকল্পনা গ্রহণ।
শহীদ ও আহত বিপ্লবীদের জন্য সমর্থন
জুলাই বিপ্লবের শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ৭৭৫ শহীদ পরিবারের মাঝে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও ভাতা এবং ১৩ হাজার ৮০০ আহত বিপ্লবীর মাঝে ১৫৩ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের বিদেশে উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মেরিটাইম এবং অবকাঠামো উন্নয়ন
বঙ্গোপসাগরকে ‘জলভিত্তিক অর্থনীতির’ মূল সম্পদ ঘোষণা। চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো হয়েছে (প্রতিদিন অতিরিক্ত ২২৫ কনটেইনার পরিচালনা), উপকূলীয় উন্নয়ন প্রকল্প সম্প্রসারণ এবং গভীর সমুদ্রের মৎস্য ও শিল্প প্রকল্পে বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ শুরু।