স্থানীয় হেডম্যান, উপজেলা ভূমি অফিস ও জেলা প্রশাসনের মহাফেজখানার কতিপয় কর্মচারির যোগসাজশে খাগড়াছড়ির রামগড়ে ভূয়া বন্দোবস্তিকৃত ভূমি অধিগ্রহণভূক্ত করে সরকারের শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা ভন্ডুল করে দিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন।
এই মহা অপকর্মের হোতা হিসেবে খাগড়াছড়ির রামগড় পৌরসভার বর্তমান ও সাবেক মেয়র, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় ভূমি জালিয়াতির ছয়টি মামলা রুজু হয়েছে।
জাল–জালিয়াতির মাধ্যমে পৌর এলাকায় সরকারি খাস খতিয়ানের প্রায় ২৬ একর ভূমি ছয়টি ভুয়া হোল্ডিং সৃজন করে ভূমি অধিগ্রহণ করে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশে রামগড় উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী কবির আহম্মদ বাদী হয়ে বুধবার মধ্যরাতে এসব মামলা দায়ের করেন।
রামগড় থানার ওসি (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম ছয়টি মামলা রুজুর বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, তিনজন আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) এসব মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এর আগে ছয়টি ভুয়া হোল্ডিং ও বন্দোবস্ত মামলা বাতিল করা হয়। এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকায় ভূমি বিভাগের তিনজন কর্মচারীকে বরখাস্ত ও অপর তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মঞ্জুরুল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের গঠিত কমিটির তদন্তে এসব জাল–জালিয়াতির ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হয়। ওই তদন্তে উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের মহাফেজখানা শাখায় উল্লেখিত ছয়টি বন্দোবস্ত মামলার মূল নথি, কবুলিয়তসহ অপরাপর রেকর্ডপত্রের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাই ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার পর গত ২০ সেপ্টেম্বর ওই ছয়টি ভুয়া বন্দোবস্তি মামলা বাতিল করেন জেলা প্রশাসক।
সূত্র জানায়, এই ছয়টি ভুয়া বন্দোবস্তসূত্রে ৩৬ জন ভূমির ভূয়া মালিক, ক্রেতা–বিক্রেতার বিরুদ্ধে রামগড় থানায় পৃথক পৃথকভাবে ছয়টি মামলা রুজু করা হয়। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ধারা ৪৬৫, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ও ৩৪ পেনাল কোডে বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ছয়টি মামলা রুজু করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি মামলাতে রামগড় পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রফিকুল আলম কামালসহ তার অপর তিন ভাইও রয়েছেন।
আরেক মামলায় রামগড় পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহানসহ (কাজী রিপন) ও তাঁর সাত ভাইবোনের নামেও একটি মামলা হয়েছে।
অপর মামলাগুলোতে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদের সাবেক সদস্য ভুবন মোহন ত্রিপুরা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ আহমেদ ভুইয়াসহ অন্যান্যদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, এরইমধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে রামগড় উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী রত্ন বিকাশ ত্রিপুরা, জেলা প্রশাসকের মহাফেজখানা শাখায় অফিস সহকারী ধনরাজ ত্রিপুরা ও সাধনা ত্রিপুরাকে এরই মধ্যে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে অসততা ও অনিয়মে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় রামগড় ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম, জেলা কানুনগো দেলোয়ার হোসেন, রামগড় ভূমি অফিসের চেইনম্যান নুরুল আফসার এবং ২২৯ নম্বর রামগড় মৌজার হেডম্যান মংসাপ্রু চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (ভূমি মন্ত্রণালয় ও মং সার্কেল চীফ) বরাবরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
প্রদীপ চৌধুরী/মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ