মো. আরিফ মিয়া। কুমিল্লার ঠাকুরপাড়া রেসিডেন্সিয়াল কলেজের সামনে ডা: রেজাউল করিমের চেম্বারে রোগীদের সিরিয়াল লেখার কাজ করেন।
গত তিন মাস ধরে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে ফোন কল পাচ্ছেন তিনি। একদিকে রোগীদের সিরিয়াল লেখার চাপ অন্যদিকে এরকম ফোনকলে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। যারা তাকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ভেবে ফোন করছেন তাদের বিষয়টি সুরাহার অনুরোধ করেও কোন প্রতিকার পাননি । ওয়েবসাইটে ভুল নাম্বার হালনাগাদ হওয়ায় এ ভোগান্তিতে পড়েছেন আরিফ।
ডা. আসিফ ইকবাল দুই বছর আগেই বদলী হয়ে কর্মরত আছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। তবে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর ওয়েবসাইটে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে তার তথ্য রয়ে গেছে। বাকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোর ওয়েবসাইটেও নেই হালনাগাদ তথ্য। জেলা ও উপজেলার বাকি দপ্তরগুলোর ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ না হওয়ায় সাধারণ মানুষ ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরকারের বিভিন্ন সেবা প্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০১১–১২ অর্থ বছরে ওয়েব পোর্টাল তৈরির কাজ শুরু হয়। এতে জেলা, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে আলাদা আলাদা ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছে। মানিকগঞ্জের বেশিরভাগ ওয়েবসাইটে ঢুকলে মিলছে না হালনাগাদ তথ্য। নেই বেশিরভাগ ইউনিয়নেও। অনেক সময় সরকারি দপ্তরের এসব ওয়েবসাইটে প্রবেশও করা যায়না। অনেক দপ্তরের ওয়েবসাইট থাকলেও লিংকগুলোতে নেই কোন তথ্য।
ওয়েবসাইটে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ জেলা ও উপজেলার দপ্তরগুলোতে রয়েছে শতাধিক ক্যাটাগরি। এসব ক্যাটাগরির অধিকাংশই পুরানো। নেই হালনাগাদ কোনো তথ্য। দপ্তরগুলোর কার্যক্রম, গুরুত্বপূর্ণ নোটিশ, কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য, বিভিন্ন সভার কার্যবিবরণী, উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য নেই অধিকাংশ ক্যাটাগরিতে। তাই এখনো প্রয়োজনের স্বার্থে সেবাপ্রার্থীদের ছুটতে হচ্ছে দপ্তরে দপ্তরে। এতে নষ্ট হচ্ছে সময় ও অর্থ। সরকারি সেবার বিভিন্ন তথ্য সাধারণ মানুষ না জানায় মাঠপর্যায়ে দুর্নীতিও বাড়ছে।
মাহবুব খান নামের এক শিক্ষার্থী জানান, দেশ এখন ডিজিটাল, ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তিতে নির্ভরশীল। তবে ওয়েবসাইটের উপজেলা বিভিন্ন দপ্তরের একাধিক ক্যাটাগরিতে কোনো তথ্য নেই। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলাগুলোর উন্নয়ন কাজের হালনাগাদ তথ্য নেই।
সাংবাদিক সোহেল হোসেন বলেন, উপজেলার কোনো দপ্তরের তথ্য ঠিকঠাকভাবে নেই। ওয়েবসাইটে কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নম্বরগুলোও হালনাগাদ নেই। সংবাদ তৈরির কাজে কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি প্রায়ই সময় বিভিন্ন তথ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওয়েবসাইটে তথ্য থাকে না বলে সংগ্রহ করতে সমস্যা হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মানিকগঞ্জের সভাপতি প্রফেসর মো.ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, ওয়েবসাইটে রাখলে সরকারি ফাইল নষ্ট ও গায়েব হওয়ার সুযোগ থাকবে না। ওয়েবসাইটে সব তথ্য হালনাগাদ করলে সবাই দেখতে পারবেন, দুর্নীতি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) শুল্কা সরকার বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের যার যার অফিসের তথ্য হালনাগাদ করা ওই অফিসের দায়িত্ব। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এসব দেখভাল করার জন্য আইসিটি বিষয়ক কমিটিও রয়েছে।
জাহিদুল হক চন্দন/শায়লা/দীপ্ত