বাংলাদেশে সাম্প্রতিক এক মারাত্মক সামাজিক, নৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহ গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে যা সাধারণ মানুষ ‘সুগার ড্যাডি’ নামে পরিচিত।
এই অপরাধমূলক প্রবণতায় কিছু ধনী, ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সমাজের তরুণী, বিশেষ করে আর্থিকভাবে দুর্বল বা সামাজিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ মেয়েদের বিবাহ বহির্ভূত অসামাজিক সম্পর্ক, শারীরিক শোষণ, মনস্তাত্ত্বিক নিপীড়ন এবং ডিজিটাল ব্লের জালে আটকে ফেলছে। বিষয়টি এতটাই উদ্বেগজনক যে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং সামাজিক মাধ্যমের আলোচনায় এটি এখন দেশব্যাপী এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ অবস্থায় মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সরকারের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কাছে রেজিস্ট্রি ডাক ও ই–মেইল মাধ্যমে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
দপ্তরগুলো হলো– স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ।
নোটিশে বলা হয়েছে, এই তথাকথিত ‘সুগার ড্যাডি‘ তরুণীদের জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে। অর্থের অভাবে, পারিবারিক চাপের কারণে বা প্রলোভনে পড়ে অনেক মেয়ে এমন এক অস্থির মানসিক অবস্থায় জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখান থেকে বের হতে পারছে না। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এই মেয়েদের কাছে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, দামি ফোন/আইফোন, ব্র্যান্ডেড পোশাক, গহনা, গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ এবং বিলাসবহুল ফ্ল্যাট দেওয়া হচ্ছে। এসব অর্থের কোনো বৈধ উৎস নেই, কর নথিতে প্রদর্শিত হয় না এবং অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি কালো টাকা, অবৈধ লেনদেন বা মানিলন্ডারিং মাধ্যমে আসছে। অর্থনীতিতে এভাবে অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রদর্শিত অর্থের প্রবাহ রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি ও কর প্রশাসনের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ ছড়িয়ে পড়েছে যে, অনেক তরুণীকে মানসিক চাপ, ভয়ভীতি বা প্রলোভনের মাধ্যমে গোপনে অশ্লীল বা ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে এবং পরে সেগুলো ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল, যৌন শোষণ ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের ব্ল্যাকমেইলিং শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ওপর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলছে। অনেক মেয়ে এই চক্র থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পরিবারে অপমান, সামাজিক লাঞ্ছনা, নিরাপত্তাহীনতা ও ভবিষ্যৎ ধ্বংসের আশঙ্কা আরও বাড়ছে।
এ ছাড়া নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সুগার ড্যাডি‘ কেবল তরুণী ও নারীদের শোষণেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি দেশের বহু পরিবারকে অস্থির করে তুলছে। অনেক ‘সুগার ড্যাডি‘ স্ত্রী ও সন্তানরা দীর্ঘদিন মানসিক চাপ, অবহেলা, পারিবারিক নির্যাতন ও অপমানের শিকার হচ্ছে। যার পরিণতিতে বিবাহবিচ্ছেদ, পারিবারিক ভাঙন এবং গভীর সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। এটি সরাসরি বাংলাদেশের পরিবারব্যবস্থা ও সামাজিক মূল্যবোধের উপর আঘাত হানছে।
এসএ