শিশুদের মানসিক, শারীরিক, সামাজিক এবং সৃজনশীল বিকাশে খেলনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক খেলনা নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের চিন্তাভাবনা, সামাজিক দক্ষতা এবং মেধার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। শিশুদের বয়স, আগ্রহ এবং মনোভাবের ওপর ভিত্তি করে খেলনা নির্বাচন করা উচিত। নিচে কিছু উন্নতমানের খেলনার ধরন এবং তাদের উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
১. শিক্ষামূলক খেলনা (Educational Toys):
শিক্ষামূলক খেলনা শিশুদের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে এবং তাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাজল, সংখ্যা ও অক্ষর সম্বলিত ব্লক বা আকৃতি চিহ্নিতকারী খেলনা শিশুদের মস্তিষ্কের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে, বর্ণ, সংখ্যা, আকার ও সম্পর্ক চিহ্নিত করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি ভাষা ও সৃজনশীল চিন্তা বিকাশে সাহায্য করে।
২. সৃজনশীল ও আর্টিস্টিক খেলনা (Creative & Artistic Toys):
রঙিন পেন্সিল, পেইন্ট, প্লে–ডোহ, কুমির ও ঘরবাড়ি তৈরির খেলনা শিশুদের সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি করে। ড্রইং বক্স, রঙিন কিউব, প্লে–ডোহ শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং তাদের শিল্পকলা ও সৃজনশীল দক্ষতা উন্নত করতে সহায়তা করে। এটি তাদের অঙ্গভঙ্গি ও ধারণার গভীরতা বাড়ায়।
৩. বহুমাত্রিক খেলনা (Multisensory Toys):
বহুমাত্রিক খেলনা এমন খেলনা যা শিশুদের বিভিন্ন অনুভূতি ব্যবহার করতে সহায়তা করে—যেমন স্পর্শ, শোনা, দেখা। সাউন্ড বক্স, টেক্সচারযুক্ত বই, রঙিন খেলনা যা আলোর মাধ্যমে সাড়া দেয়। শিশুদের মস্তিষ্কের স্নায়ু পথ শক্তিশালী হয়। শব্দ, রং ও টেক্সচার ব্যবহার তাদের অনুভূতিশক্তি এবং সৃষ্টিশীল চিন্তা বৃদ্ধি করে।
৪. শারীরিক খেলা (Physical Play):
শারীরিক খেলা শিশুর শরীরী উন্নতি ও বিকাশে সহায়ক। এটি তাদের সমন্বয়, ভারসাম্য এবং শক্তি বৃদ্ধি করে। ছোট বাইক, বল, দৌড়ানোর খেলনা, সুইং শিশুর শারীরিক শক্তি, মাংসপেশি, এবং মোটর দক্ষতা উন্নত হয়। এটি মস্তিষ্কের উন্নত চিন্তাভাবনা ও একাধিক কাজ একসঙ্গে করার দক্ষতাও বাড়ায়।
৫. সামাজিক খেলা (Social Play):
যত বেশি শিশু একসাথে খেলতে পারে, তাদের সামাজিক দক্ষতা তত বেশি বিকশিত হয়। এই ধরনের খেলনা শিশুদের সহানুভূতি, সহযোগিতা, ও শেয়ারিং শিখায়। টেডি বিয়ার, ডল, ফার্মের সেট, পুতুলের বাড়ি ইত্যাদি খেলনার মাধ্যমে শিশু শেখে কীভাবে একে অপরের সাথে কাজ করতে হয়, সমবেদনশীল হতে হয় এবং সমস্যা সমাধানে একসাথে কাজ করতে হয়।
৬. গণনা ও সমস্যা সমাধানের খেলনা (Counting & Problem-Solving Toys):
পাজল, ম্যাজিক বল এবং লজিক্যাল খেলনা শিশুদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বিকশিত করতে সহায়তা করে। এসব খেলনা শিশুদের চিন্তার গভীরতা বাড়ায় এবং তাদের সংকেত বোঝার ক্ষমতা উন্নত করে। সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে তাদের গাণিতিক ধারণার ধারণা তৈরি হয়।
৭. নেচারাল খেলনা (Natural Toys):
প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি খেলনা যেমন কাঠ বা তুলা, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক। কাঠের পাজল, জুট বা ক্যানভাসের তৈরি খেলনা শিশুকে প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সহায়তা করে এবং তাদের মেধা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
৮. রোল–প্লে বা ভূমিকাভিত্তিক খেলনা (Role-Play or Imaginative Toys):
শিশুদের ভূমিকাভিত্তিক খেলা তাদের মনোযোগ, চিন্তা ও কল্পনাশক্তি উন্নত করতে সহায়ক। ডাক্তার খেলার সেট, রেস্টুরেন্ট খেলার সেট, পুলিশের খেলনা। শিশুদের সামাজিক ও আবেগগত দক্ষতা শেখায়, কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয় এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে।
শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য সঠিক খেলনার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধান, সামাজিক দক্ষতা, শারীরিক বিকাশ এবং অনুভূতির বিকাশে খেলনার ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাবা–মায়ের উচিত শিশুদের বয়স এবং বিকাশের স্তরের সাথে মানানসই খেলনা প্রদান করা, যাতে তাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক দক্ষতা সমানভাবে উন্নত হয়।