চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকাল ৪টার দিকে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
এদিন, দুপুরে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই রাজধানী, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী, বিশিষ্টজন ও সর্বস্তরের মানুষ।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম–এর বোন সাহিদা সাত্তার বলেন, ‘আমার ভাই যে কতটা জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন…গত এক সপ্তাহে হাসপাতাল তাঁর ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ও আজ এখানে বৃষ্টির মধ্যেও এত মানুষের সমাগমে আমরা অভিভূত হয়েছি।’
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুলার রোডে পাশাপাশি বাড়িতে অনেক বছর থেকেছি। তিনি ছিলেন খুবই জনপ্রিয় শিক্ষক। সেই জনপ্রিয়তা কত ব্যাপক, তা আজ এই বৃষ্টি উপেক্ষা করে এত মানুষের সমাগম দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তিনি নির্লোভ ও বিনয়ী ছিলেন। তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস ছিল। নতুন লেখকদের উৎসাহ দিতেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা দুজনেই সিলেটের মানুষ। আমরা পরিবেশ ইস্যুতে অনেক সময় একসঙ্গে কাজ করেছি। তিনি ছিলেন গভীর প্রজ্ঞাবান ও নিঃস্বার্থ মানুষ।’
এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ অপরাজেয় বাংলার সামনে রাখা হয়।
অপরাজেয় বাংলার সামনে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, ইংরেজি বিভাগ চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী, ইংরেজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, সংগীত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমাদ খান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান।
ইসরায়েল কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে আজ ভোরে দেশে ফিরেছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিনিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, গীতিকবি, শহীদুল্লাহ ফারায়েজি।
এছাড়াও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের পক্ষে মফিদুল হক, নাট্যজন ম হামিদ, ব্র্যাকের আসিফ সালেহ, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, প্রথম আলোর পক্ষ থেকে নির্বাহী সম্পাদক, কবি ও সাংবাদিক সাজ্জাদ শরিফ, প্রথম আলোর উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়া, বাংলা একাডেমির পক্ষে মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, পরম কথার পক্ষে কথাসাহিত্যিক ঝর্না রহমান প্রমুখ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
উল্লেখ্য, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ১৯৫১ সালে সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং কানাডা কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইংরেজি বিভাগে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করে ২০১৮ সালে চাকরির নির্ধারিত সময় শেষ করে অবসর নেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে যোগ দেন। ২০২৩ সালে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক করা হয়।
এসএ