শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

দৈনিক কত কদম হাঁটা দরকার, বিজ্ঞান কী বলছে?

দীপ্ত নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: সর্বশেষ সম্পাদনা: 4 minutes read

কদম মেপে হাঁটার সঙ্গে শারীরিক উন্নতির সম্পর্ক নিয়ে বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে গবেষণা করেছেন। এদিকে আজকাল আবার চাইলেই সহজে হিসেব রাখা যায় দৈনিক আপনি কত কদম হাঁটছেন।

ছবি: জুপকো মকোভস্কি/শাটারস্টক

হাঁটা শরীরের জন্য ভালো- এ কথা একবাক্যে সবাই স্বীকার করে নেবেন। কিন্তু তা-ই বলে সময়ে-অসময়ে হেঁটে বেড়ালে তো চলবে না। আবার একদিনে কতটুকু হাঁটা ইচিত, সেটা নিয়েও একটু ভাবতে হবে।

কদম মেপে হাঁটার সঙ্গে শারীরিক উন্নতির সম্পর্ক নিয়ে বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে গবেষণা করেছেন। এদিকে আজকাল আবার চাইলেই সহজে হিসেব রাখা যায় দৈনিক আপনি কত কদম হাঁটছেন। স্মার্টফোন, স্মার্টঘড়ি ইত্যাদি ডিজিটাল ডিভাইসে স্টেপ কাউন্টারের মাধ্যমে কত পা হাঁটতে হবে সে লক্ষ্যও ঠিক করে রাখা যায়।

কিন্তু আমাদের শরীর কি আমাদের তৈরি করা ডিভাইসগুলোর কথা মেনে চলার জন্য তৈরি করা হয়েছে? ব্যায়াম যদি সবকিছু হতো, তাহলে কম হেঁটেও তো একজন সাইক্লিস্টের স্বাস্থ্যও দুর্দান্তরকমের ভালো থাকত, তা-ই না?

স্টেপ কাউন্টার যে একেবারে অকার্যকর এমন ধারণাও ঠিক নয়। ধরা যাক, আপনি সকালবেলা বাগান পরিষ্কার করলেন, কিন্তু আপনার মনে নেই ঠিক কত সময় ধরে আপনি কাজটা করেছেন। সেক্ষেত্রে স্টেপ কাউন্টার কিন্তু আপনাকে ভালো ধারণা দিতে পারবে ওটুকু সময়ের মধ্যে আপনি কত পা হেঁটেছেন।

হাঁটার উপকারিতা নিয়ে করা গবেষণাগুলো সাধারণত পর্যবেক্ষণমূলক হয়। এসব গবেষণার তথ্যমতে, যেসব মানুষ দৈনিক বেশি হাঁটেন, তারা তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়ে সুস্থ থাকেন। কিন্তু এটা কি কার্যকারণ? যাদের স্বাস্থ্য দুর্বল তাদের পক্ষে হয়তো প্রতিদিন হাঁটার ব্যায়াম করা সম্ভব নয়।

এসব কিছু মাথায় রেখে সাম্প্রতিক সময়ে হাঁটার পরিমাণ নিয়ে কয়েকটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। জেনে নেওয়া যাক এ গবেষণাগুলোর ফলাফল কী বলছে।

যেকোনো কারণে মৃত্যু ও ক্যান্সারে মৃত্যু
এ গবেষণাটির তথ্যমতে, যেকোনো কারণে মৃত্যু ও ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকির ক্ষেত্রে ১০,০০০ কদম হাঁটা ব্যক্তির ঝুঁকি ৮,০০০ কদম হাঁটা ব্যক্তির ক্ষেত্রে কম থাকে। এভাবে প্রতি ২০০০ কদম কমে যাওয়ার কারণে ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

তবে ১০,০০০ পা হাঁটার সঙ্গে তার চেয়ে বেশি ধাপ হাঁটার বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। এ গবেষণাটি প্রকৃতি কার্যকারণতে নির্দেশ করে কিনা তা নিশ্চিত নয়।

এটির জন্য গবেষকেরা যুক্তরাজ্যের ৪০-৭৯ বছর বয়সী ৭৮,৫০০ মানুষের হাঁটার উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ছিলেন।

স্মৃতিভ্রংশ
এ গবেষণা জানাচ্ছে, দৈনিক ৯,৮০০ পা হাঁটলে মানুষের স্মৃতিভ্রংশে ভোগার ঝুঁকি কমে যায়। এটির তথ্যমতে, ৩,৮০০ পা যারা হাঁটেন, তাদের চেয়ে ৯,৮০০ পা হাঁটা ব্যক্তিদের এ ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়। গবেষণাটি প্রথম গবেষণার গবেষকেরা একই নমুনার ওপর করেছেন।

পর্যবেক্ষণমূলক এ গবেষণার জন্য তরুণদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন গবেষকেরা। যদিও সচরাচর তরুণ বয়সে মানুষ স্মৃতিভ্রংশে আক্রান্ত হন না।

বয়স্ক নারীদের মৃত্যুঝুঁকি
এ গবেষণার দাবি, যেসব বয়স্ক নারী দিনে ২,৭০০ পা হাঁটেন, তাদের তুলনায় ৪,৪০০ পা হাঁটা নারীদের মৃত্যুঝুঁকি কমে যায়।

এ গবেষণায় অংশ নিয়েছেন গড়ে ৭২ বছর বয়সী ১৬,৭৪১ জন নারী। এদের ৯৫ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ এবং বেশিরভাগ নার্স।

মধ্যবয়সী মানুষদের মৃত্যুহার
৪১ থেকে ৬৫ বছর বয়সের মানুষদের মৃত্যুহারের সঙ্গে হাঁটার সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত হয়েছে এ গবেষণাটি।

এতে দেখা যায়, প্রতিদিন যারা ৭,০০০ কদম হাঁটেন, তাদের মৃত্যুঝুঁকি এর চেয়ে কম পরিমাণ হাঁটা মানুষদের চেয়ে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে যায়।

এ গবেষণায় অংশ নিয়েছেন ২,১১০ জন। এদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ নারী, ও ৪২ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ। এদের ওপর গবেষণা করার পরেও আরও ১১ বছর তাদের শারীরিক পরিস্থিতির ওপর নজর রেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা।

ধমনির জড়তাবৃদ্ধি
ধমনিতে সমস্যা হলে তা হৃদযন্ত্রের রোগে পরিণত হতে পারে। এ গবেষণায় সিস্টেমেটিক পর্যালোচনা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে প্রতিদিন ২০০০ কদম করে হাঁটার পরিধি বাড়ালে তা ধমনির দৃঢ়তা (আর্টেরিয়াল স্টিফনেস) কমাতে সহায়তা করে।

ব্যায়ামের ব্যাপারে এ গবেষকদের মত হলো, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। অর্থাৎ একেবারে ব্যায়াম না করার চেয়ে অল্প ব্যায়াম করা ভালো। আর ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়ানো গেলে সেটা আরও ভালো।

এ গবেষণাটি করা হয়েছে মূলত আগের ২০টি গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে বিশ্লেষণ করে।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
এ গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী প্রতিদিন হাঁটার চর্চা ১০০০ কদম করে বাড়ালে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি দুই শতাংশ কমে যায়। যেসব ব্যক্তি দৈনিক ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ কদম হাঁটেন তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৫,০০০ কদমের কম হাঁটা ব্যক্তিদের চেয়ে ১৮ শতাংশ কমে যায় বলেই জানা গেছে এ গবেষণাটি।

তবে গবেষণাটির একটি সীমাবদ্ধতা হলো এটি কেবল হিসপ্যানিক ও লাতিনো মানুষদের মধ্যে করা হয়েছে।

এসব গবেষণা থেকে যা বোঝা যাচ্ছে
গবেষণাগুলো কৌতূহলোদ্দীপক হলেও এগুলোর ফলাফল দেখেই তাকে অপরিবর্তনীয় সত্য হিসেবে মান ভুল হবে। দৈনিক কেবল কয়েক হাজার পা স্বেচ্ছায় বেশি হেঁটে কোনো রোগ বা মৃত্যুর ঝুঁকি কতটুকু কমানো সম্ভব তা এখনও প্রশ্নসাপেক্ষ।

তবে এ গবেষণাগুলো থেকে একটা বিষয় নিশ্চিত করে বলে যায়, তুলনামূলকভাবে সুস্থ মানুষেরা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণ হাঁটেন। তবে কতটুকু পরিমাণ হাঁটা শরীরের জন্য উত্তম তার নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যাই এসব গবেষণা স্থির করতে পারেনি।

শেষ কথা হলো, এ গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে আমাদের সাধারণ ধারণার বেশ মিল আছে। আমরা সাধারণত মনে করি, সারাদিন শুয়েবসে না থেকে একটু হাঁটাচলা করলে শরীর ভালো থাকবে। গবেষণাগুলো এ ধারণাটিকেই গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণ করেছে। তাই হাঁটার সংখ্যা আর ব্যায়ামের সময়ের পরিমাণ নিয়ে ধন্দে না পড়ে নিয়মিত একটু-আধটু হাঁটাচলা বা শরীরচর্চার অভ্যাস আমাদের সবারই করা উচিত।

সূত্র: লাইফহ্যাকার

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More