রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, লংগদু, জুরাছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, রাজস্থলী উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে দুর্গম এইসব এলাকার মানুষ। লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় সাড়ে তিনহাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাহাড়ি ঢলে নিখোঁজ আছে একশিশু ও এক কিশোর।
রাঙামাটিতে টানা বর্ষণে জেলার বিভিন্ন উপজেলার অর্ধলক্ষ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় নিন্মাঞ্চলসহ পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে ১৫–২০হাজার মানুষ। হাটু পানিতে ডুবে গেছে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়। এতে ফসলী জমি ডুবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাঘাইছড়ি পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের হাজিপাড়ায় মঙ্গলবার বিকালে জুয়েল(৭) নামে এক শিশু পাহাড়ি ঢলে ভেসে যায়। তার সন্ধ্যানে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন।
জুরাছড়ি উপজেলার মৈদং ইউনিয়নের ফকিরাছড়ি, জামেরছড়ি হাজাছড়ি, বাড়াবাইন্না, শীলছড়ি, পানছড়ি। জুরাছড়ি ইউনিয়নে শীলছড়ি,ঘিলাতলী, কুসুমছড়ি, ডেবাছড়া। বনযোগী ছড়া ইউনিয়নে বেহারাছড়ি, শুকনাছড়ি, ডেবাছড়ি, ত্রিপুরছড়া, ছোট পানছড়ি। দুমদুম্য ইউনিয়নেও অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী রয়েছে ১০হাজার মানুষ। পাশাপাশি আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, ডুবে গেছে ফসলী জমি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। দুর্গম অনেক এলাকায় নেটওয়ার্ক না থাকায় সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জনপ্রতিনিধিরা এখনো জানতে পারছে না বলে জানিয়েছেন।
বরকল উপজেলার তিনটা ইউনিয়ন বড় হরিণার কুকিমারা, আইমাছড়ার কলাবুনিয়া , ভূষণছড়া সরকার পাড়া বামল্যান্ড পড়াসহ আশপাশের এলাকার ১৩শতাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এই উপজেলায়ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ কিশোরের সন্ধ্যান দুইদিনপরও মেলেনি।
বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নসহ বেশকিছু এলাকায় পাহাড়ি ঢলের কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০হাজার মানুষ। এতে ফারুয়া বাজার, গুয়াইনছড়ি, এরুইজ্জাছড়ি, তত্তানালাসহ কয়েকটাগ্রাম প্লাবিত এবং নিন্মাঞ্চল পানির নিচে তলিয়েগেছে। বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে এইসব এলাকার মানুষ।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বেশকিছু সড়ক পাহাড়ি ঢলে ডুবে যাওয়ায় লংগদু উপজেলার সাথে সাড়াদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
ড়িবিলাইছ ও জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান জানান, উপজেলার বিলাইছড়ি ও জুরাছড়িতে বেশকিছু ইউনিয়ন পাহাড়ি ঢলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের সহযোগীতায় আমরা ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম করছি, পাশাপাশি নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থাও নিয়েছি। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেওয়ায় বিলাইছড়িতে জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৩০ হাজার পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট ও জুরাছড়িতে প্রয়োজনীয় পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট সরবরাহ করণের জন্য বলা হয়েছে। পাহাড়ি ঢল বেশি থাকায় ত্রাণ বিতরণে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, রাঙামাটির জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় কৃষিজ জমি ডুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জুরাছড়ি উপজেলায় ৩ হেক্টর ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় ২হাজার ৯শত হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আউশ আমন ধান ও সবজির ক্ষতি হয়েছে।
রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বডুয়া জানান, পাহাড়ি ঢল ও পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা গুলোতে ডিমান্ড সাপেক্ষে ইতিমধ্যে দেড় লক্ষ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরো পাঠানো হবে।
মোরশেদ আলম/দীপ্ত নিউজ