আজ ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মজয়ন্তী। এ দিনটি বাঙালি জাতির জন্য কেবল একটি সাহিত্যিকের জন্মদিন নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ও মানসিক মুক্তির প্রতীক।
১৮৬১ সালের এই দিনে, কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি শুধু একজন কবি নন, ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, চিত্রশিল্পী ও দার্শনিক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এমন কোন শাখা নেই, যেখানে রবীন্দ্রনাথের ছোঁয়া পড়েনি।
তার লেখনীতে যেমন ছিল প্রেম, প্রকৃতি ও জীবনদর্শনের গভীরতা, তেমনি ছিল উপনিবেশবিরোধী চেতনার তীব্র প্রকাশ। তাঁর জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ এবং অন্যান্য গদ্য সংকলন। তিনি উপমহাদেশের প্রথম নোবেল বিজয়ী, ১৯১৩ সালে কাব্যগ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলি’ এর জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
রবীন্দ্রনাথের রচনায় বাঙালির জাতিসত্তা গড়ে উঠেছে—যেখানে রয়েছে মানবতা, উদারতা ও আত্মমর্যাদাবোধ। তারই রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ আজ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত।
‘রবীন্দ্রসংগীত’ নামে পরিচিত তাঁর রচিত ২,২৩২টি গানের সংগ্রহ বাঙালির জীবনের প্রতিটি অনুভূতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। প্রেম, প্রকৃতি, প্রতিবাদ, আত্মদর্শন—সবই মিশে আছে তার গানে।
তিনি ছিলেন শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে মানবিকতা ও আন্তর্জাতিকতার সাথে মিলিয়ে নতুন শিক্ষার দর্শন নির্মাণ করেন, যা আজও প্রাসঙ্গিক।
বিশ্বকবির জন্মদিনে আজ বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবিতা পাঠ। টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠান।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। সাহিত্যিক, গবেষক ও সংস্কৃতিসেবীরা তার অবদানকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ আজও আমাদের জীবনের প্রতিটি সংকট, ভালোবাসা ও আত্মঅন্বেষণের সঙ্গে সমানভাবে যুক্ত। তিনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন—বাঙালির মননে ও চেতনায়।